সিরিয়ার ক্ষমতাচ্যুত প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদ দামেস্ক ছেড়ে পালিয়ে রাশিয়ার রাজধানী মস্কোয় গিয়ে আশ্রয় নিয়েছেন।
রাশিয়ার প্রেসিডেন্টের কার্যালয় ক্রেমলিনের বরাত দিয়ে এ তথ্য জানিয়েছে দেশটির রাষ্ট্রায়ত্ত বার্তাসংস্থা তাস। খবর রয়টার্সের।
তাসে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পরিবারের সদস্যরাসহ মস্কো এসে পৌঁছেছেন বাশার আল আসাদ। রাশিয়া তাদের বসবাসের অনুমতি দিয়েছে। বাশার আল আসাদের সঙ্গে আছেন তার স্ত্রীর আসমা আসাদ এবং এই দম্পতির তিন ছেলেমেয়ে- জেইন আল আসাদ, করিম আল আসাদ এবং হাফেজ আল আসাদ। ক্রেমলিনের তথ্য অনুযায়ী, তারা সবাই এখন মস্কোতে রয়েছেন।
সিরিয়ায় উদ্ভূত পরিস্থিতি নিয়ে জাতিসংঘে আলোচনা এবং সেখানকার বিদ্রোহী গোষ্ঠীর সঙ্গে জাতিসংঘের প্রতিনিধিদরের দ্বিপাক্ষিক সংলাপের আহ্বান জানিয়েছে মস্কো।
তাসের প্রতিবেদনে আরো বলা হয়েছে, ক্ষমতা দখলকারী বিদ্রোহীগোষ্ঠীর নেতৃত্বের সঙ্গেও কথা বলেছে ক্রেমলিন। বিদ্রোহীরা আশ্বাস দিয়েছে যে সিরিয়ায় রুশ সেনাদের ঘাঁটির কোনো ক্ষয়ক্ষতি তারা করবে না।
বাশার আল আসাদ সিরিয়ার প্রেসিডেন্টের পদে আসেন ২০০০ সালে। এর আগে তার বাবা হাফেজ আল-আসাদ ২৯ বছর দেশটি শাসন করেছিলেন।
এদিকে ৫৩ বছরের স্বৈরাচারী শাসকদের পতনের পর দেশটির নিয়ন্ত্রণ এখন বিদ্রোহীদের হাতে। এ খবরে সাধারণ মানুষ রাজপথে নেমে উল্লাস করেছেন। প্রেসিডেন্টের প্রাসাদে ঢুকে লুটপাটও চালিয়েছেন অনেকে।
সিরিয়রা রবিবার দামেস্কের রাস্তায় নেমে পড়ে আকাশে বন্দুক ছুঁড়ে উদযাপনে মেতে উঠে। তারা প্রেসিডেন্ট বাশার আসাদের আকস্মিক উৎখাতে ও তার পরিবারের ৫০ বছরের লৌহ শাসনের অবসানে তারা উল্লসিত।
বিদ্রোহীরা দামেস্ক দখলের পর বাশার আল–আসাদের বাসভবনে অনেকেই ঢুকে পড়েন। এক ব্যক্তিকে প্রেসিডেন্ট ভবনের ভেতরে হেঁটে যেতে দেখা যাচ্ছে।
দামেস্ক থেকে এএফপির প্রতিনিধি জানিয়েছেন, বাশার আল–আসাদের পতনের পর রাজধানী দামেস্কে অবস্থিত প্রেসিডেন্টের ছয়তলা বাসভবনে ঢুকে পড়েন সাধারণ জনতা। তাঁদের মধ্যে নারী, শিশু ও পুরুষ ছিলেন। অনেককে সেখান থেকে জিনিসপত্র নিয়ে যেতে দেখা গেছে। বিভিন্ন কক্ষ তছনছ করে ফেলা হয়েছে। সম্মেলনকক্ষে ধরিয়ে দেওয়া হয়েছে আগুন।
উল্লেখ্য, রবিবার তাহরির আল-শাম (এইচটিএস) নামের একটি জঙ্গিগোষ্ঠীর নেতৃত্বে বিদ্রোহীরা দামেস্কে প্রবেশ করে, বাশারও প্রায় কাছাকাছি সময়ে দেশত্যাগ করেন। সে সময় অবশ্য গুঞ্জন উঠেছিল যে বাশারকে বহনকারী বিমানটি দুর্ঘটনা কবলিত হয়েছে এবং এতে বাশার নিহত হয়েছেন। তবে এই গুঞ্জনের পক্ষে নির্ভরযোগ্য কোনো প্রমাণ ছিল না।
সিরিয়ার সরকারি টেলিভিশনে একটি ভিডিও-বার্তা সম্প্রচার করে একদল বিদ্রোহী বলেছে, অপরাধী শাসনের পতন হয়েছে” এবং সমস্ত বন্দিকে মুক্তি দেওয়া হয়েছে। তারা “মুক্ত সিরিয়া”র প্রতিষ্ঠানগুলিকে রক্ষা করতে মানুষকে আহ্বান জানিয়েছে। পরে বিদ্রোহীরা দামেস্কে বিকাল ৪ট থেকে পরদিন সকাল ৫টা পর্যন্ত কার্ফ্যু জারী করেছে।
বিদ্রোহী কমান্ডার আনাস সালখাদি, যিনি বিকালে টিভিতে হাজির হয়েছিলেন, সিরিয়ার ধর্মীয় ও জনজাতিগত সংখ্যালঘুদের আশ্বস্ত করে বলেছেন, সিরিয়া সকলের, কোনও ব্যতিক্রম নেই। সিরিয়া দ্রুজ, সুন্নি, আলাউই ও অন্যান্য সম্প্রদায়ের।
তিনি আরও যোগ করেন, আসাদ পরিবার যেভাবে মানুষের সঙ্গে আচরণ করেছে আমরা তেমনটা করব না।