সিরিয়ায় বিদ্রোহীদের হামলার মুখে ক্ষমতাচ্যুত প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদ দেশ ছেড়ে পালানোর পর বিদ্রোহীরা যখন সরকার গঠনের চেষ্টা করছে এমন সময় সিরিয়াজুড়ে ব্যাপক বিমান হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল।
রাজধানী দামেস্কসহ মধ্যপ্রাচ্যের এই দেশটি জুড়ে শতাধিক বিমান হামলা চালায় ইহুদিবাদী এই দেশটি।
মঙ্গলবার ১০ ডিসেম্বর এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।
বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইসরায়েলি যুদ্ধবিমান রাজধানী দামেস্কসহ সারা দেশে কয়েক ডজন হামলা চালিয়েছে বলে সিরিয়ার গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে। যুক্তরাজ্যভিত্তিক সিরীয় পর্যবেক্ষক সংস্থা সিরিয়ান অবজারভেটরি ফর হিউম্যান রাইটস (এসওএইচআর) জানিয়েছে, সামরিক লক্ষ্যবস্তুতে ১০০টির বেশি হামলা হয়েছে।
স্থানীয় মিডিয়া রিপোর্ট অনুযায়ী, রাসায়নিক অস্ত্র উৎপাদনের সাথে যুক্ত একটি গবেষণা কেন্দ্রও হামলার শিকার স্থাপনাগুলোর মধ্যে রয়েছে।
ইসরায়েল বলেছে, তারা আসাদ সরকারের পতনের পর “চরমপন্থিদের হাতে” অস্ত্র যাওয়া বন্ধ করতে কাজ করছে।
এদিকে প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের পতনের পর দেশটির পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করতে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ বৈঠক করেছে।
এসওএইচআর বলেছে, গত দুই দিনে শত শত ইসরায়েলি বিমান হামলা হয়েছে, যার মধ্যে দামেস্কের এমন একটি স্থাপনাও রয়েছে যা ইরানি বিজ্ঞানীরা রকেট তৈরির জন্য ব্যবহার করেছেন বলে জানা গেছে।
রাসায়নিক অস্ত্রের সন্দেহভাজন মজুদ নিরাপদ কিনা তা নিশ্চিত করার জন্য জাতিসংঘের রাসায়নিক পর্যবেক্ষণ সংস্থা সিরিয়ার কর্তৃপক্ষকে যখন সতর্ক করছে তখনই এই হামলা চালানো হলো।
জাতিসংঘের রাসায়নিক পর্যবেক্ষণ সংস্থা “রাসায়নিক অস্ত্র নিরস্ত্রিকরণ সংস্থার (ওপিসিডব্লিউ)” মতে, রাসায়নিক অস্ত্র এর বাইরের বিষাক্ত বৈশিষ্ট্যের মাধ্যমে ইচ্ছাকৃত মৃত্যু বা ক্ষতিসাধন করতে ব্যবহৃত হয়। রাসায়নিক অস্ত্রের ব্যবহার আন্তর্জাতিক মানবিক আইনের অধীনে নিষিদ্ধ।
সিরিয়ার কোথায় বা কতগুলো রাসায়নিক অস্ত্র রয়েছে তা জানা যায়নি, তবে সাবেক প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদ এই ধরনের অস্ত্রের মজুদ রেখেছিলেন এবং তিনি যে ঘোষণা দিয়েছিলেন তা অসম্পূর্ণ ছিল বলে মনে করা হয়।
উল্লেখ্য, এর আগে ২০১৩ সালের আগস্টে সিরিয়ার দোমা শহর ও পূর্ব ঘৌটা জেলায় বেসামরিক নাগরিকদের ওপর রাসায়নিক হামলার অভিযোগ ওঠে। ওই সময় দেশটির এই দুই এলাকায় সিরীয় সরকারি বাহিনীর হামলায় এক হাজারের বেশি মানুষের প্রাণহানি ঘটে।
সেই হামলার পর যন্ত্রণায় খিঁচুনি হওয়া মানুষের ভয়ঙ্কর ছবি বিশ্বকে চমকে দিয়েছিল। পশ্চিমা দেশগুলো বলেছে, ওই হামলাটি শুধুমাত্র সরকারই করতে পারত, কিন্তু আসাদ বিরোধীদের দায়ী করেছিলেন। ২০১৮ সালে বিবিসির বিশ্লেষণে নিশ্চিত করা হয়েছিল, ২০১৪ থেকে ২০১৮ সালের মধ্যে সিরিয়ার গৃহযুদ্ধে কমপক্ষে ১০৬ বার রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহার করা হয়েছে।
এদিকে সিরিয়ায় সরকারহীনতার সুযোগ নিয়ে গোলান মালভূমি দখল করে নিয়েছে ইসরায়েল। ১৯৭৪ সালে ওই মালভূমি নিয়ে দুই প্রতিবেশী দেশের মধ্যে চুক্তি হয়েছিল।
কিন্তু গত রবিবার ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু জানিয়েছেন, তিনিই ইসরায়েল ডিফেন্স ফোর্সকে (আইডিএফ) গোলানের সিরিয়ার অংশে প্রবেশের নির্দেশ দিয়েছেন। তার বক্তব্য, কোনও শত্রু শক্তিকে আমরা নিজেদের সীমান্তে কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করতে দেব না। সিরিয়ার সঙ্গে গোলান নিয়ে যে চুক্তি হয়েছিল, তা সেখানকার সরকার পতনের সঙ্গে সঙ্গেই ভেঙে গেছে।