গাজা উপত্যকায় অবিলম্বে যুদ্ধবিরতি দাবি এবং জাতিসংঘের ফিলিস্তিনি শরণার্থী সংস্থা (ইউএনআরডব্লিউএ)-এর কার্যক্রমের প্রতি সমর্থন জানিয়ে সর্বসম্মতিক্রমে দুটি প্রস্তাব পাস করেছে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ।
বৃহস্পতিবার ১২ ডিসেম্বর এক প্রতিবেদনে সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা এ সংবাদ জানিয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, বুধবার ১১ ডিসেম্বর (নিউইয়র্কের স্থানীয় সময়) অবিলম্বে নিঃশর্ত এবং স্থায়ী যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব নিয়ে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ভোটে ১৯৩ সদস্যের মধ্যে ১৫৮টি ভোট পক্ষে পড়ে, আর বিপক্ষে পড়েছে ৯ ভোট। ভোটদানে অনুপস্থিত ছিল ১৩ সদস্য দেশ।
গাজায় চলমান ইসরাইলি নির্মমতার বিরুদ্ধে সারা বিশ্ব বিবেক যেখানে প্রতিবাদে মুখর, ঠিক সে সময় যুদ্ধবিরতির বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে যোগ দিয়েছে আরো ৮ দেশ। যুদ্ধবিরতি প্রস্তাবের বিপক্ষে দাঁড়ানো দেশগুলোর মধ্য রয়েছে- ইসরাইল, আর্জেন্টিনা, হাঙ্গেরি, প্যারাগুয়ে, টোঙ্গা, পাপুয়া নিউ গিনি, নাউরু এবং চেক প্রজাতন্ত্র।
যুক্তরাষ্ট্রের বিরোধীতা সত্ত্বেও প্রস্তাবটি জাতিসংঘে পাস হয়। পাস হওয়া প্রস্তাবে ইসরাইল ও ফিলিস্তিনি স্বাধীনতা আন্দোলন হামাসের মধ্যে অবিলম্বে শর্তহীন ও স্থায়ী যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানানো হয়েছে। এতে গাজায় ইসরাইলি জিম্মিদের তাৎক্ষণিক মুক্তির দাবিও করা হয়েছে।
জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের প্রস্তাবগুলো মানতে আইনি বাধ্যবাধকতা না থাকলেও এর রাজনৈতিক গুরুত্ব রয়েছে। এসব প্রস্তাবে বিভিন্ন দেশের বৈশ্বিক দৃষ্টিভঙ্গি প্রতিফলিত হয়।
গাজায় যুদ্ধ বন্ধে বিশ্বের ব্যর্থতার কথা উল্লেখ করে জাতিসংঘে আলজেরিয়ার উপ-রাষ্ট্রদূত নাসিম গাওয়াউই বলেন, ফিলিস্তিনি ট্র্যাজেডির মুখে নীরবতা ও ব্যর্থতার মূল্য অত্যন্ত ভারী। এটি আগামীতে আরও ভারী হবে।
স্লোভেনিয়ার জাতিসংঘের রাষ্ট্রদূত স্যামুয়েল জবোগার সাধারণ পরিষদের বৈঠকে যুদ্ধবিরতির জন্য জোর দাবি জানিয়ে বলেছেন, গাজার আর কোনো অস্তিত্ব নেই। এটা ধ্বংস হয়ে গেছে। বেসামরিক মানুষ ক্ষুধা, হতাশা এবং মৃত্যুর মুখোমুখি হচ্ছে। এই যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার কোনো কারণ নেই। আমাদের এখন যুদ্ধবিরতি দরকার। আমাদের এখন জিম্মিদের বাড়িতে নিয়ে আসতে হবে।
এদিকে ইউএনআরডব্লিউএ-এর প্রতি সমর্থন জানিয়ে প্রস্তাবে ইসরায়েলকে আন্তর্জাতিক বাধ্যবাধকতা মানার আহ্বান জানিয়ে প্রস্তাবে বলা হয়েছে, ইউএনআরডব্লিউএ-এর কার্যক্রমে বাধা দেওয়া বন্ধ করতে হবে এবং গাজায় ত্রাণ সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে।
ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্রের মতে, এই প্রস্তাব হামাসের প্রতি ভুল বার্তা দিচ্ছে এবং তাদের কার্যক্রমকে আরও শক্তিশালী করবে।
ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্রের বিরোধিতা থাকলেও বিশ্বের অধিকাংশ দেশ গাজার মানবিক সংকট নিরসনে দ্রুত পদক্ষেপের পক্ষে অবস্থান নিয়েছে।
প্রসঙ্গত, গাজার সংঘাতে এখন পর্যন্ত ৪৪,৮০৫ জন নিহত এবং ১,০৬,২৫৭ জন আহত হয়েছে। যাদের অধিকাংশই বেসামরিক নারী ও শিশু। এই যুদ্ধ মূলত ফিলিস্তিনি নারী ও শিশুদের জীবনকে ভয়াবহ বিপর্যয়ের দিকে ঠেলে দিয়েছে। ইসরায়েলি এই হামলায় হাসপাতাল, স্কুল, শরণার্থী শিবির, মসজিদ, গির্জাসহ হাজার হাজার ভবন ধ্বংস হয়ে গেছে। এছাড়া ইসরায়েলি আগ্রাসনের কারণে প্রায় ২০ লাখেরও বেশি বাসিন্দা তাদের বাড়িঘর ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন।
জাতিসংঘের মতে, ইসরায়েলের বর্বর আক্রমণের কারণে গাজার প্রায় ৮৫ শতাংশ ফিলিস্তিনি বাস্তুচ্যুত হয়েছেন। আর খাদ্য, বিশুদ্ধ পানি এবং ওষুধের তীব্র সংকটের মধ্যে গাজার সকলেই এখন খাদ্য নিরাপত্তাহীন অবস্থার মধ্যে রয়েছেন। এ ছাড়া অবরুদ্ধ এই ভূখণ্ডের ৬০ শতাংশ অবকাঠামো ধ্বংস হয়ে গেছে। ইসরায়েল ইতোমধ্যেই আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে গণহত্যার অভিযোগে অভিযুক্ত হয়েছে।
উল্লেখ্য, গত বছরের নভেম্বরে কাতার ও মিসরের মধ্যস্থতায় হামাস ও ইসরায়েলের মধ্যে সাতদিনের একটি যুদ্ধবিরতি চুক্তি হয়েছিল। চুক্তির আওতায় হামাস শতাধিক ইসরায়েলি বন্দীকে মুক্তিও দেয়। তবে এখনো তাদের হাতে শতাধিক ইসরায়েলি বন্দী রয়েছে।