দুর্গাপূজার বাকি আর মাত্র কয়েক দিন। বছর ঘুরে আবার দরজায় কড়া নাড়ছে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গোৎসব।
আর এই উৎসবকে কেন্দ্র করে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে পূজা মণ্ডপগুলোতে চলছে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি। বেশিরভাগ জায়গায় প্রতিমা গড়া শেষ, চলছে রঙের কাজ। রঙের আঁচড়ে দেবী দুর্গাকে সাজিয়ে তোলা হচ্ছে নানা রঙে। পূজা ঘনিয়ে আসায় এখন রাত দিন ব্যস্ত সময় পার করছে মৃৎশিল্পীরা।
সরেজমিনে দেখা যায়, প্রতিটি প্রতিমাকে রঙ-তুলির নিপুণ আঁচড়ে রাঙাতে ব্যস্ত শিল্পীরা। চলছে সাজ-সজ্জার কাজও। দেবী দুর্গার সাথে সাজিয়ে তোলা হচ্ছে কার্তিক, গণেশ, লক্ষ্মী আর সরস্বতী দেবীকেও। যেন দম ফেলার ফুসরত নেই মৃৎশিল্পীদের। পুরুষদের কাজে সাহায্য করছে বাড়ির নারীরাও।
কলাপাড়া উপজেলায় এ বছর ১০টি মণ্ডপে পালিত হবে দুর্গা উৎসব। ইতোমধ্যে প্রশাসনের পক্ষে থেকে সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। শারদীয় দুর্গাপূজাকে নির্বিঘ্নে সম্পন্ন করতে উপজেলা পূজা উদযাপন পরিষদ এবং মন্দির কমিটির সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করছে আনসার ও পুলিশ সদস্যরা।
এছাড়া সিরাজগঞ্জের কামারখন্দ উপজেলার ভদ্রঘাট পালপাড়া মৃৎশিল্পী শ্রীকান্ত পাল জানান, এ বছর পূজার আগে করোনার প্রভাব কমে যাওয়ায় গত বারের চেয়ে পূজা মণ্ডপের সংখ্যা বেড়েছে। এবার তিনি ২৫ টি দুর্গা প্রতিমা তৈরির কাজ পেয়েছেন। সবকটি প্রতিমার মাটির কাজ প্রায় শেষ। এখন রং তুলির কাজ চলছে।
তিনি জানান, আগামী দুই তিন দিনের মধ্যেই সব কাজ শেষ হয়ে যাবে। রং ও সাজ সজ্জার কাজ শেষ হলে এখান থেকে প্রতিমাগুলো জেলার বিভিন্ন পূজা মণ্ডপে পাঠানো হবে।
জেলার সবচে বড় পাল পাড়া ভদ্রঘাট পাল পাড়ায় মোট ৫০টি পাল পরিবার দীর্ঘদিন ধরে প্রতিমা তৈরির কাজ করে আসছে। এবছর এই পাল পাড়ায় প্রায় ২০০টি প্রতিমা তৈরি হচ্ছে। জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি সন্তোষ কুমার কানু জানান, এবার জেলার ৯টি উপজেলায় ৫৪৭টি পূজা মণ্ডপে দুর্গাপূজার আয়োজন করা হয়েছে।
আগামী ৮ অক্টোবর মহাষষ্ঠীতে দেবীর বোধনের মধ্য দিয়ে দুর্গাপূজার আনুষ্ঠানিকতা শুরু হবে। ১২ অক্টোবর দশমীতে বিসর্জন ও শোভাযাত্রার মধ্য দিয়ে শেষ হবে শারদীয় দুর্গাৎসব।
প্রতিমা শিল্পি রিপন পাল বলেন, আমরা কুয়াকাটা শ্রী শ্রী রাধাকৃষ্ণ মন্দির তীর্থযাত্রী সেবাশ্রমের প্রতিমাগুলো নতুন করে রং ও তুলির আঁচড় দিয়ে সাজিয়ে তুলছি। আগে ৭০/৮০ হাজার টাকায় পুরো প্রতিমা তৈরি করা থেকে সাজানো পর্যন্ত খরচ হত।এখন মালামালের দাম বৃদ্ধি ,শিল্পিদের পারিশ্রমিক বাড়ার কারণে খরচ প্রায় দিগুণ। তবুও এ কাজ আমাদের করতেই হবে কারণ এটা আমাদের ধর্মীয় রীতিনীতি। শেষ মুহূর্তে দেবীকে পড়ানো হবে পোশাক-পরিচ্ছেদসহ অন্যান্য আল্পনা।
সাতক্ষীরা থেকে কুয়াকাটা মন্দিরে সেবাহীত হিসেবে আশা মনোহর চন্দ্র মন্ডল বলেন, পঞ্জিকা মতে আগামী ৮ অক্টোবর শুরু হবে শারদীয় দুর্গাপূজা। এ দিন হবে ষষ্ঠি পূজা। আর ১২ অক্টোবর শনিবার দশমীতে চোখের জলে দেবী বির্সজনের মধ্যে দিয়ে শেষ হবে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের বড় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা এছাড়া মিশ্রি পাড়া, মম্বি পাড়াসহ অন্যান্য মণ্ডপের কাজ শেষ পর্যায়।
কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকত লাগোয়া শ্রী শ্রী রাধাকৃষ্ণ মন্দির তীর্থযাত্রী সেবাশ্রমের সাধারণ সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার নীহার রঞ্জন মন্ডল বলেন, হিন্দু সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় উৎসব দুর্গাপূজা। আমরা ইতোমধ্যে আমাদের প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছি। এখন শুধু মাত্র বাকি আনুষ্ঠানিকতা। আশা করি এবারের পূজা আনন্দ ও নিরাপদে উৎযাপন করতে পারব। পূজায় সরকারি সহায়তা আগের চেয়ে একটু বাড়িয়ে দেয়ার আহ্বান জানান তিনি।
তিনি আরও বলেন, এ উপজেলায় মোট ১০টি মন্দিরে দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হবে। ইতোমধ্যে পূজা উদযাপনের প্রস্তুতির কাজ আশি ভাগ শেষ হয়েছে। মণ্ডপগুলোতে কেউ যেন বিশৃঙ্খলা ঘটাতে না পারে সে জন্য পুলিশ প্রশাসন সর্বদা দায়িত্ব পালন করবে। আমরা সতর্কতার সঙ্গে বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করছি। ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে সবাইকে এ উৎসবে সামিল হওয়ার আহ্বান জানিয়েছি।
এবার পূজা মণ্ডপ ঘিরে সকল ধরনের নিরাপত্তা নিশ্চিতে ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছে উপজেলা প্রশাসন।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. রবিউল ইসলাম জানান, শারদীয় দুর্গোৎসব উপলক্ষে এ উপজেলার প্রতিটি পূজা মণ্ডপে প্রশাসনের পক্ষ থেকে শতভাগ নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হয়েছে, পুলিশ প্রশাসন সার্বক্ষণিক দায়িত্ব পালন করবেন।