National Online News Portal of Bangladesh - বাংলাদেশের জাতীয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল - بوابة الأخبار الوطنية على الإنترنت لبنغلاديش - बांग्लादेश का राष्ट्रीय ऑनलाइन समाचार पोर्टल - بنگلہ دیش کا قومی آن لائن نیوز پورٹل
ছবি: সংগৃহিত

হজ নিবন্ধনে আশানুরূপ সাড়া নেই

  ।।বিকে রিপোর্ট।।  রবিবার | অক্টোবর ২৭, ২০২৪ | ১০:১২ এএম

দেশে গত ১ সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হয় প্রাথমিক নিবন্ধন। ২৩ অক্টোবরের মধ্যে নিবন্ধন চূড়ান্ত করার কথা বলা হলেও সেই আহ্বানে খুব একটা সাড়া মেলেনি।

হজের প্রাথমিক নিবন্ধন শুরু হলেও এখনো প্যাকেজ ঘোষণা না হওয়ায় হজ পালনেচ্ছুরা আছেন ধোঁয়াশায়। নিতে পারছেন না সিদ্ধান্ত, ফলে নিবন্ধনের গতি কম।

গতকাল শনিবার বিকাল সাড়ে ৫টা পর্যন্ত হজ ব্যবস্থাপনা পোর্টালের তথ্যানুযায়ী, এ পর্যন্ত নিবন্ধন করেছেন মাত্র ৮ হাজার ৩৩৪ জন। এর মধ্যে সরকারি মাধ্যমে ২ হাজার ৫৫৫ জন এবং বেসরকারি মাধ্যমে ৫ হাজার ৭৭৯ জন।

এ ছাড়া হজ ব্যবস্থাপনার সঙ্গে যুক্ত দেশের ১২৪টি এজেন্সিতে একজন হজযাত্রীও নিবন্ধন করেননি। শর্তানুযায়ী, এসব এজেন্সির বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা নিতে পারে মন্ত্রণালয়।

উল্লেখ্য, ২০২৫ সালে হজে গমনেচ্ছুদের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের জন্য ১ লাখ ২৭ হাজার জনের কোটা নির্ধারণ করে দিয়েছে সৌদি সরকার।

কিন্তু প্রাথমিক নিবন্ধন শুরুর প্রায় দুই মাস পেরিয়ে গেলেও সাড়া না মেলার বিষয়ে কারণ হিসেবে হজ ব্যবস্থাপনার এজেন্সিগুলো বলছে, প্যাকেজ মূল্য ঘোষণা না করায় আশানুরূপ সাড়া পাওয়া যাচ্ছে না।

অন্যদিকে প্রাথমিক নিবন্ধনের টাকা কমানোর দাবি জানিয়েছেন দি সিটি ট্রাভেলসের ব্যবস্থাপনা অংশীদার হাফেজ নুর মোহাম্মদ। তিনি বলেন, ‘তিন লাখ টাকা যে সরকার চাচ্ছে, এটার একটা ব্যাখ্যা প্রয়োজন। কারণ আমাদের কাছে হাজিরা জানতে চান এত টাকা প্রাথমিক নিবন্ধনে কেন নেওয়া হচ্ছে।

একদিকে আমরা প্যাকেজে কী থাকছে, প্যাকেজ কোন ধরনের হচ্ছে, কত টাকার হচ্ছে তার কিছুই বলতে পারছি না। অন্যদিকে তার কাছে তিন লাখ টাকা চাচ্ছি এটা কোনো যুক্তিতেই তারা মানেন না। ফলে প্যাকেজ ঘোষণার আগ পর্যন্ত আমরা হাজিদের নিবন্ধনে আগ্রহী করতে পারছি না।’ এ জন্য দ্রুত হজ প্যাকেজ ঘোষণা করার দাবি জানান তিনি।

হজ নিবন্ধনে এবার টাকার পরিমাণ বেশি কেন, এ বিষয়ে ধর্ম মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, আমরা আগের বছরগুলোতে দেখেছি অনেকেই নিবন্ধন করে পরে বাকি টাকা জোগাড় করতে পারেন না। তাই এবার উড়োজাহাজ ভাড়াসহ কিছু খরচ যা আমাদের মাথাপিছু দিতেই হয়, সেই টাকা হিসাবে এই তিন লাখ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।

কারণ হজ প্যাকেজের খরচ গতবারের তুলনায় কিছুটা হয়তো কমবে; কিন্তু তাকে তো তিন লাখ টাকার বেশিই দেওয়া লাগবে পুরো প্যাকেজের খরচ হিসাবে। তাই আমরা প্রাথমিক নিবন্ধনের জন্য তিন লাখ টাকা নির্ধারণ করেছি।’

চলতি সপ্তাহ ঘোষণা হতে পারে হজে ব্যয়ের প্যাকেজ। ধারণা করা হচ্ছে, প্যাকেজ ঘোষণার পর নিবন্ধন বাড়তে পারে। তবে আগামী বছর বাংলাদেশ থেকে হজযাত্রীর কোটা পূরণ নিয়ে সন্দিহান সংশ্লিষ্টরা।

নিবন্ধনে হজযাত্রীদের কেন এত অনাগ্রহএমন প্রশ্নে শূন্য নিবন্ধনের দুটি এজেন্সির কর্মকর্তারা জানান, রাজনৈতিক একটি পটপরিবর্তন হয়েছে। আবার মানুষের কাছে এখন নগদ টাকাও কম, অনেকের ব্যবসা বাণিজ্যে গতি নেই। এ ছাড়া অন্তর্বর্তী সরকার শুরু থেকে বলে আসছে হজের ব্যয় কমানোর চেষ্টা করবে। তাই কত টাকা প্যাকেজ ঘোষণা হয়, তা জেনে নিবন্ধনের অপেক্ষায় রয়েছেন অনেকে।

ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর হজের খরচ কমানোর দাবি ওঠে। সেই লক্ষ্যে কাজ করছেন ধর্ম উপদেষ্টা ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন। খরচ কমাতে তিনি বাংলাদেশ বিমান কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথাও বলেছেন। এরপর তিনি সৌদি আরব গিয়ে দেশটির প্রতিনিধিদের সঙ্গে কথা বলে এসেছেন। এখন দেশে বিদেশের ব্যয় পর্যালোচনা করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন ধর্ম মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা।

হজের প্রস্তুতি ও ব্যয় প্রসঙ্গে ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আ ফ ম খালিদ হোসেন জানান, একটি সাশ্রয়ী প্যাকেজ ৩০ অক্টোবর আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করা হবে। এ লক্ষ্যে হিসাব-নিকাশ চলছে।

ধর্ম উপদেষ্টা বলেন, বিমানের সাথে খুবই ফলপ্রসূ আলোচনা হয়েছে। চূড়ান্ত হিসাবটা আমরা এখনও করিনি। বিমান নীতিগতভাবে খরচ কমাতে রাজি হয়েছে। এ ছাড়া এনবিআর ও ঢাকা বিমানবন্দর ব্যবহারে যে ট্যাক্স দিতে হয়, এটা মওকুফের চিন্তা করা হচ্ছে। হজ এজেন্সিগুলো হজযাত্রীদের টিকিটে একটি অ্যামাউন্ট পায়। সবাই মিলে হজ প্যাকেজটা জনবান্ধব করতে চাই, কমিয়ে আনতে চাই, তাই তাদের অনুরোধ করব, সেই অ্যামাউন্টটা যাতে তারা না নেন। সবার কনসিডারে হজের ব্যয়ও কমে যাবে।

নিবন্ধন প্রসঙ্গে উপদেষ্টা জানান, ২৩ তারিখের মধ্যে অগ্রাধিকারভিত্তিতে করলে আমরা আন্দাজ করতে পারতাম আমাদের কতজন হবে। সেক্ষেত্রে আমরা সৌদি আরবে জোনগুলো নির্ধারণ করতে পারতাম। নিবন্ধনের জন্য ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত যথেষ্ট সময় আমরা পাচ্ছি।

জানা গেছে, আগামী বছর ১৯ ফেব্রুয়ারি হজের ভিসা প্রক্রিয়া শুরু হবে। আর হজ ফ্লাইট শুরু হবে মে মাসে। তবে আগ্রহীরা ৩০ হাজার টাকা দিয়ে প্রাক নিবন্ধন করে রেখেছেন। এখন ৩ লাখ টাকা জমা দিয়ে করতে হচ্ছে প্রাথমিক নিবন্ধন।

গত বছর ২০২৪ সালে মাথাপিছু হজযাত্রীকে সর্বনিম্ন ৫ লাখ ৯০ হাজার টাকা প্যাকেজে হজে যাওয়ার সুযোগ দিয়েছিল ধর্ম মন্ত্রণালয়। ২০২৩ সালে এই খরচ ছিল যাত্রীপ্রতি সর্বনিম্ন ৬ লাখ ৮৩ হাজার টাকা; যা রেকর্ড গড়ে। ফলে গত দুই বছরই হজযাত্রীদের কাংখিত সাড়া মেলেনি। হজের খরচ বেড়ে যাওয়ায় অনেকেই ওমরাহে যেতে আগ্রহী হয়ে ওঠেন।

হজের উড়োজাহাজ ভাড়া দিন দিন অস্বাভাবিকহারে বৃদ্ধি পাওয়ায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে প্রতিবাদ জানিয়েছেন কয়েকজন প্রাক নিবন্ধনকারী। তারা মেইলের মাধ্যমে ধর্ম উপদেষ্টা ড. আ ফ ম খালিদ হোসেনের কাছে আবেদনে হজযাত্রীদের উড়োজাহাজ ভাড়া জনপ্রতি ১ লাখ ৩০ হাজার টাকা নির্ধারণ করতে বলেন। প্রয়োজনে হজযাত্রীদের উড়োজাহাজ ভাড়া সহনীয় পর্যায়ে আনতে আন্তর্জাতিক দরপত্র আহ্বান করে থার্ড ক্যারিয়ার চালু করারও দাবি জানান তারা।

তাদের দাবি, ‘প্রতিবছর হজের খরচ উদ্বেগজনক হারে বেড়ে যাচ্ছে। অন্যান্য দেশের তুলনায় বাংলাদেশ থেকে হজ টিকিটের উড়োজাহাজ ভাড়া অনেক বেশি। দুই-তিনটি এয়ারলাইনসের মাধ্যমে হজযাত্রী পরিবহনের ব্যবস্থা করায় প্যাকেজের মেয়াদ দীর্ঘ হয় ও ভাড়া বেড়ে যায়। মাত্রাতিরিক্ত উড়োজাহাজ ভাড়ার কারণে সরকারি ও বেসরকারিভাবে নির্ধারিত হজ প্যাকেজ মূল্য প্রতিবছর বাড়ে। ফলে সাধারণ হজযাত্রীরা আর্থিক চাপের মুখে পড়ছেন। অনেকে হজে যাওয়ার সক্ষমতা হারাচ্ছেন।

এমতাবস্থায় হজযাত্রীদের পরিবহন ও সেবা প্রদানের জন্য দেশি-বিদেশি এয়ারলাইনসের অংশগ্রহণের জন্য আন্তর্জাতিক দরপত্র আহ্বান করা যেতে পারে। বিশ্বের অনেক দেশে হজযাত্রীদের পরিবহন ও সেবা প্রদানে এই প্রচলন রয়েছে। এর ফলে দেশীয় এয়ারলাইনসের পাশাপাশি বহুজাতিক এয়ারলাইনসগুলোর অংশগ্রহণমূলক প্রতিযোগিতাপূর্ণ পরিবেশ সৃষ্টি হবে এবং হজযাত্রী পরিবহন ব্যয়ের তুলনামূলক মূল্য নির্ধারণ ও মানসম্পন্ন সেবা নিশ্চিত করা সহজ হবে বলে আমরা মনে করি।’

উল্লেখ্য, চাঁদ দেখা সাপেক্ষে আগামী ১ জুন পবিত্র হজ পালিত হওয়ার কথা। ২০২৫ সালের হজে বাংলাদেশ ১ লাখ ২৭ হাজার ১৯৮ জনের কোটা পেয়েছে। আগামী ১৩ জানুয়ারি সৌদি সরকারের সঙ্গে হজ চুক্তি সম্পন্ন হবে। আর ৩০ অক্টোবর চলতি বছরের হজ প্যাকেজ ঘোষণা করা হবে।