বিদ্যুৎখাতে প্রতিযোগিতার অনুপস্থিতি এবং গুটিকয়েক প্রতিষ্ঠানের একচ্ছত্র আধিপত্যের কারণে অধিক মূল্যে জ্বালানি ক্রয় করতে হচ্ছে। জ্বালানি খাতে প্রায় ৫২ হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি দিতে হচ্ছে, মাথাপিছু ভর্তুকির পরিমাণ প্রায় ৩০০০ টাকা- বলেছেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান।
শনিবার ৭ ডিসেম্বর ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই) আয়োজিত জ্বালানির সহনীয় মূল্য ও নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহ শীর্ষক সেমিনারে তিনি এসব তথ্য জানান।
উপদেষ্টা বলেন, গ্রাহকরা প্রতি ইউনিটের বিদ্যুতের গড় মূল্য ৮.৫৫ টাকা প্রদান করলেও সরকার ১২-২৫ টায় কিনে থাকে। এলএনজি আমদানিতে ৭০ টাকা খরচ পড়লেও, শিল্পখাতে ৩০ টাকা হারে সরবরাহ করা হচ্ছে এবং মূল্যের এ পার্থক্যটা সরকারকে ভর্তুকি দিতে হচ্ছে।
জ্বালানি উপদেষ্টা বলেন, আমাদের ৪ হাজার এমএমসিএফটি গ্যাসের প্রয়োজন, যদিও আমাদের রয়েছে ৩ হাজারের কম। ঘাটতি মেটাতে নিজের গ্যাস উত্তোলন কার্যক্রম বাড়াতে হবে। ভোলায় প্রায় ৭০ সিএমএফএফটি গ্যাস মজুদ রয়েছে, যা উত্তোলনে উন্মুক্ত দরপত্র আহ্বান জানানো হবে।
এখন থেকে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে উন্মুক্ত প্রতিযোগিতা ছাড়া কোনো দরপত্র আহ্বান করা হবে না উল্লেখ করে তিনি বলেন, তেল আমদানি উন্মুক্ত দরপত্রের কারণে পূর্বের চেয়ে ৩৫ শতাংশ হ্রাসকৃত মূল্য পাওয়া গেছে, এর ফলে সাশ্রয় হবে ৩৭০ কোটি টাকা।
বিদ্যুৎ খাতে আইপিপি-এর পরিবর্তে মার্চেন্ট পাওয়ার প্ল্যান্ট ব্যবস্থা চালু হবে বলে উল্লেখ করে তিনি বলেন, পর্যায়ক্রমে ৪০টি সৌর বিদ্যুৎ প্রকল্পের বিজ্ঞাপন দেওয়া হবে এবং এ ধরনের প্রকল্পগুলোর জন্য প্রয়োজনীয় জমির সংস্থান সরকার থেকে করা হবে।
তিনি উল্লেখ করেন, সরকারি কিছু সংস্থা যেমন; বিদ্যুৎ কেন্দ্র, রেল, পানি উন্নয়ন বোর্ড ও সড়ক বিভাগের অনেক জমি আছে, যেটা ব্যবহৃত হচ্ছে না, সেখানে এ ধরনের সৌর বিদ্যুৎ প্রকল্প।
এছাড়াও নবায়নযোগ্য জ্বালানির জন্য ১৫ বছরের জন্য কর অব্যাহতির সুযোগ প্রদানের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। এখাতে অর্থায়নের জন্য বন্ধকি ঋণের পরিবর্তনে সম্পদ ভিত্তিক ঋণ ব্যবস্থা প্রচলনের উপর গুরুত্ব দেওয়া উচিত।
সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের পেট্রোলিয়ম ও খনিজ সম্পদ ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ তামিম।
ডিসিসিআই সভাপতি বলেন, সৌরবিদ্যুতের প্রচুর সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও ভূমি বরাদ্দ ব্যবস্থাপনায় জটিলতা ও দীর্ঘসূত্রিতার পাশাপাশি প্রয়োজনীয় জমির অপ্রতুলতার কারণে আমরা বেশ পিছিয়ে রয়েছি, বিষয়টি সক্রিয় বিবেচনা করা প্রয়োজন। কিছু বিদ্যুৎ কেন্দ্র বেশ পুরোনো এবং ২০৩০ সাল নাগাদ এগুলোর উৎপাদন সক্ষমতা উল্লেখজনক হারে হ্রাস পাবে, বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে এখনই উদ্যোগ গ্রহণ করা প্রয়োজন।
পারমাণবিক শক্তি ও নবায়নযোগ্য জ্বালানি ভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদন যেমন বাড়ানো দরকার, তেমনি জ্বালানি আমদানিতে বিদ্যমান সরকারি ক্রয় নীতিমালা সংশোধন করে মূল্য স্থিতিশীল রক্ষার কৌশলও নিতে হবে।