আসন্ন পবিত্র রমজানকে কেন্দ্র করে দেশের বাজারে দাম সহনীয় পর্যায়ে রাখতে ভোজ্য তেল আমদানি, উৎপাদন ও ব্যবসায়ী পর্যায়ে মূল্য সংযোজন কর বা ভ্যাট অব্যহতি দিয়েছে সরকার।
সোমবার ১৬ ডিসেম্বর এক বিজ্ঞপ্তিতে এনবিআর জানায়, ১৫ ডিসেম্বর এ সংক্রান্ত আলাদা ৩টি প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের এক প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, সয়াবিনসহ বিভিন্ন তেলের ওপর ভ্যাট কমানোর সিদ্ধান্তটি আগামী ৩১ মার্চ পর্যন্ত বলবৎ থাকবে। আগে ১৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত এই সুবিধা দেওয়া হয়েছিল।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, এ সব প্রজ্ঞাপনে সানফ্লাওয়ার, ক্যানোলা, সয়াবিন ও পাম ওয়েল বিক্রয়ের ওপর স্থানীয় পর্যায়ে প্রদেয় মূল্য সংযোজন কর ২০২৫ সালের ৩১ মার্চ পর্যন্ত সম্পূর্ণ অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। এ ছাড়া এ সব পন্যের আমদানি পর্যায়ে প্রদেয় মূসক ১৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৫ শতাংশ করা হয়েছে। ফলে এ সব পণ্যের ওপর আমদানি পর্যায়ে ৫ শতাংশ মূসক ছাড়া অন্য কোনো শুল্ক-করাদি অবশিষ্ট নেই। এ লক্ষ্যে সর্বশেষ তিনটি এসআরও জারি করা হয়েছে।
আরও বলা হয়, এর আগে গত ১৭ অক্টোবর ও ১৯ নভেম্বর জারি করা শুল্ক-করাদি অব্যাহতির প্রজ্ঞাপন দুটি সয়াবিন ও পাম ওয়েলের ক্ষেত্রে ১৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রযোজ্য ছিল। ভোজ্যতেলের বাজার স্থিতিশীল রাখা এবং ভোক্তাসাধারণের জন্য ভোজ্যতেলের মূল্য সহনীয় রাখার উদ্দেশ্যে সয়াবিন ও পামতেলের পাশাপাশি এবার অপরিশোধিত ও পরিশোধিত সানফ্লাওয়ার তেল ও ক্যানোলা তেলের আমদানির ওপর বিদ্যমান শুল্ক-কর ও মুসক কমানো হলো।
উল্লেখ্য, গত ৯ ডিসেম্বর সয়াবিন তেলের দাম প্রতি লিটারে আট টাকা বেড়েছে। এর ফলে প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেল এখন বিক্রি হচ্ছে ১৭৫ টাকায়। প্রতি লিটার খোলা সয়াবিন তেলের দাম ১৪৯ টাকা থেকে বেড়ে হয়েছে ১৫৭ টাকা। খোলা পাম তেলের লিটারও ১৪৯ টাকা থেকে বেড়ে ১৫৭ টাকা হয়েছে। এ ছাড়া বোতলজাত পাঁচ লিটার সয়াবিন তেলের দাম এখন ৮৬০ টাকা, যা আগে ছিল ৮১৮ টাকা।
সয়াবিন ও পামতেলের সাম্প্রতিক আন্তর্জাতিক বাজারে ঊর্ধ্বমুখী দর বিবেচনায় নিয়ে রমজান মাসে পণ্যটির সরবরাহ স্বাভাবিক রাখার উদ্দেশ্যে নতুন প্রজ্ঞাপন তিনটির মেয়াদ আগামী ৩১ মার্চ পর্যন্ত বলবৎ রাখা হয়েছে বলেও জানানো হয়।
সানফ্লাওয়ার তেল ও কেনোলা তেলের কাস্টমস ডিউটি, রেগুলেটরি ডিউটি, আগাম কর ও অগ্রিম আয়কর সম্পূর্ণ প্রত্যাহার করায় এবং মূল্য সংযোজন কর কমানো কারণে এসব তেলের আমদানি ব্যয় লিটার প্রতি ৪০-৫০ টাকা কমবে।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের নেয়া এসব পদক্ষপে ভোজ্যতেলের সরবরাহ বৃদ্ধি পাবে এবং এর ফলে বাজার মূল্য সর্বসাধারণের জন্য সহনীয় পর্যায়ে রাখা যাবে বলে আশা করছে এনবিআর।
সয়াবিন তেলের মূল্য বৃদ্ধির পর দেশের বাজারে ভোজ্যতেলের পর্যাপ্ত সরবরাহ নিশ্চিত করতে রাইস ব্র্যান অয়েল বা ধানের কুঁড়ার তেল রপ্তানি নিয়ন্ত্রণে শুল্কারোপের প্রস্তাব করেছে বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন (বিটিটিসি)। সংস্থাটি এ জন্য অপরিশোধিত ও পরিশোধিত—উভয় ধরনের কুঁড়ার তেল রপ্তানির ওপর ২৫ শতাংশ নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক (আরডি) আরোপের সুপারিশ করেছে।
মূলত আসন্ন পবিত্র রমজান মাসে ভোজ্যতেলের সরবরাহ ও দাম সহনীয় রাখতে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিচ্ছে সরকার। তারই অংশ হিসেবে ভ্যাট ও অগ্রিম কর প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।