টিকটক তারকা বানানো ও বিদেশে চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে টিকটকচক্রের মাধ্যমে ভারতে পাচার হওয়া বাংলাদেশি এক তরুণীকে এবার হত্যার ঘটনা ঘটেছে। লাশ উদ্ধারের পর সম্প্রতি ভারতের গুজরাট পুলিশ ফোনে ওই তরুণীর বাবাকে এ তথ্য জানিয়েছে।
নিহত তরুণীর নাম টুম্পা আক্তার। তাঁর বাবার নাম রহিম সেখ। ঢাকার ডেমরা থানার খোলাপাড়া এলাকা থেকে এক বছর আগে নিখোঁজ হন তিনি। গতকাল খোলাপাড়ার বাসায় গিয়ে রহিম সেখের সঙ্গে কথা বলে আরো জানা যায়, ২০২১ সালের শেষের দিকে টুম্পা নিখোঁজ হন। এর ১৬ দিন পর ফোন করে টুম্পা বাবাকে জানান, তিনি দুবাই চলে গেছেন। পরে জানান, তিনি ভারতে।
তবে কার সঙ্গে কিভাবে তিনি দুবাই যান, কিভাবে পাচার হন—সে বিষয়ে প্রশ্নের কোনো জবাব না দিয়েই টুম্পা ফোন কেটে দেন। তবে পরে আরেকবার ফোন করে টুম্পা বলেছিলেন, তিনি চক্রের ফাঁদে পড়েছেন। চক্রের সদস্যরা আরো অনেক বাংলাদেশি নারীকে ফাঁদে ফেলেছে। তাদের কথা না শোনায় তারা এর আগে এক তরুণীকে হত্যা করে। ওই তরুণীর লাশের ভিডিও করায় তাঁকেও হত্যার হুমকি দেয়। রহিম সেখ গতকাল বুধবার জানান, গত শনিবার গুজরাট পুলিশ মোবাইলে ফোন করে জানায়, টুম্পাকে হত্যা করা হয়েছে। তাঁর লাশ এখন গুজরাট পুলিশের হাতে।
এ হত্যার অভিযোগে নারীসহ তিন জনকে আটক করেছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব-৬)। আটক আসামিরা হলেন- আলী হোসেন (২০), মো. আল আমিন (১৯) ও কুলসুম বেগম (৪৫)।
শনিবার ২৫ ফেব্রুয়ারি দুপুরে র্যাব কার্যালয়ে প্রেস ব্রিফিংয়ে র্যাব-৬ খুলনার অধিনায়ক লে. কর্নেল মো. মোসতাক আহমেদ এ তথ্য জানিয়েছেন।
ভিকটিম টুম্পা তার বাবা-মায়ের সঙ্গে ঢাকার ডেমরা এলাকায় একটি ভাড়া বাসায় বসবাস করতো। আসামিরা আর্থিক প্রলোভন দেখিয়ে, টিকটক সেলিব্রেটি বানিয়ে দেওয়া ও বিদেশে চাকরি দেওয়ার নাম করে পাচারকারী বৃষ্টি এবং নবাবের পরিকল্পনায় ভিকটিমকে ঢাকা থেকে খুলনায় নিয়ে আসেন। এরপর বৃষ্টির মা কুলসুমের বাসায় ভিকটিমকে তিন দিন রাখা হয়। পরে তাকে বেনাপোল সীমান্ত দিয়ে ভারতে পাচার করা হয়।
ভারতে একটি বাসায় ভিকটিমকে আটকে রেখে এনআইডি কার্ড ও আধার কার্ড তৈরি করে বিভিন্ন অনৈতিক কাজ করাতো। এরপর বৃষ্টি এবং নবাবের নির্দেশে আলী হোসেনের জিম্মায় অনৈতিক কাজ করার জন্য ভিকটিমকে দুই মাস আটকে রাখা হয়েছিল এবং জোরপূর্বক ভিকটিমের সঙ্গে আলী হোসেনের টিকটক ভিডিও বানানো হতো, পাশাপাশি ভিকটিমকে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করা হতো।
পরবর্তীতে ভিকটিম পাচারকারীদের সব গোপন তথ্য জেনে যায় এবং তাদের অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে দেশে আসার চেষ্টা করে। বিষয়টি জানতে পেরে ভিকটিমকে হত্যা করা করা হয়।
গত ২৬ জানুয়ারি ভারতের গুজরাট পুলিশ ফোন করে ভিকটিমের বাবাকে জানায় যে, তার মেয়েকে হত্যা করা হয়েছে। পরবর্তীতে অন্য একটি ফোনের মাধ্যমে ভিকটিমের বাবাকে জানানো হয় আসামি আলী হোসেন তার মেয়েকে নৃশংসভাবে হত্যা করেছেন।
তিনি বলেন, এখন সরকারের সহযোগিতায় মেয়েটির লাশ দেশে আনার চেষ্টা চলছে। মেয়েটির বাবা খুবই দরিদ্র। তেমন লেখাপড়া জানেন না। তাঁকে আমি সহযোগিতা করছি। টুম্পার বাবা জানান, এ ঘটনায় ডেমরা থানায় একটি মামলা করবেন তাঁরা। এতে ডেমরা থানা পুলিশের সোর্স জয়কে আসামি করা হবে। এই জয় টুম্পার স্বামী। টুম্পা পাচার হওয়ার আগে জয়ের সঙ্গে তার বিয়ে হয়। তাদের একটি ছোট্ট মেয়ে আছে। রহিম সেখের দাবি, বিয়ের পর থেকে জয় তার মেয়েকে মারধর করত। টিকটকচক্রের সঙ্গে হাত মিলিয়ে জয় তাঁর মেয়েকে পাচার করেছে।
এ বিষয়ে ভিকটিমের বাবা র্যাবের কাছে একটি অভিযোগ দায়ের করেন। র্যাব তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে আসামিদের শুক্রবার ২৪ ফেব্রুয়ারি নড়াইল ও খুলনা থেকে গ্রেফতার করে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আসামিরা অপরাধের সঙ্গে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেন। তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য ঢাকার ডেমরা থানায় হস্তান্তরের প্রস্তুতি চলছে।