মা প্রসংগে পবিত্র কোরআনে আল্লাহ ঘোষনা করেন, 'আমি তো মানুষকে তার পিতা-মাতার প্রতি সদাচরণের নির্দেশ দিয়েছি। জননী সন্তানকে কষ্টের পর কষ্ট করে গর্ভে ধারণ করেন এবং তার দুধ ছাড়ানো হয় দুই বছরে; সুতরাং আমার (আল্লাহর) প্রতি এবং তোমার পিতা-মাতার প্রতি কৃতজ্ঞ হও। প্রত্যাবর্তন তো আমারই কাছে। ' (সুরা-৩১ লুকমান, আয়াত: ১৪)।
মে মাসের দ্বিতীয় রোববার বিশ্ব মা দিবস পালন করা হয়। পৃথিবীর সব থেকে মধুর ডাক হলো ‘মা’। সন্তানের জন্য সব থেকে বেশি যে আত্মত্যাগ করতে পারেন যিনি তিনি হলেন মা। যদিও মায়ের প্রতি ভালবাসা প্রকাশে কোন দিন-ক্ষণের প্রযোজন নেই, তবু একটা বিশেষ দিনকে মায়ের জন্য স্মরনীয় করে রাখার জন্যই মা দিবস পালন।
আজ ১৪ মে রবিবার। বিশ্ব মা দিবস আজ। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মতো বাংলাদেশেও দিবসটি উদযাপন করা হচ্ছে।
মা দিবসের সূচনা হয় ১৯০৮ সালে। যুক্তরাষ্ট্রের ফিলাডেলফিয়ার এক স্কুলশিক্ষিকা অ্যানা জারভিস সেখানকার পারিবারিক বিচ্ছিন্নতা দেখে মর্মাহত হয়ে মায়ের জন্য বিশেষ দিন পালনের মাধ্যমে সচেতনতা সৃষ্টি করার কথা ভাবলেন। ভাবনা বাস্তবায়নের আগে ১৯০৫ সালের ৯ মে তিনি মারা যান।
তার মৃত্যুর পর মেয়ে অ্যানা এম জারভিস মায়ের শেষ ইচ্ছা পূরণের উদ্দেশ্যে কাজ শুরু করেন। বন্ধুবান্ধবকে নিয়ে ১৯০৮ সালে তার মা ফিলাডেলফিয়ার যে গির্জায় উপাসনা করতেন, সেখানে সব মাকে নিয়ে একটি অনুষ্ঠানের মাধ্যমে মা দিবসের সূচনা করেন।
১৯১৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রে আনুষ্ঠানিকভাবে মে মাসের দ্বিতীয় রোববারকে মায়েদের জন্য উত্সর্গ করে সরকারি ছুটির দিন ঘোষণা করা হয়।
সারা বিশ্বের মতো বাংলাদেশেও আজ নানা আয়োজনে দিবসটি উদযাপিত হচ্ছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলো ভরে উঠেছে মাকে নিয়ে আবেগভরা নানা ছবি ও লেখায়।
সন্তানের লালনপালনসহ মানুষ হিসেবে গড়ে তোলায় মায়ের অবদান অনস্বীকার্য। হয়তো এজন্য আজো মানুষের মুখে মুখে ফেরে গণসঙ্গীত শিল্পী ফকির আলমগীরের সে গান- মায়ের এক ধার দুধের দাম কাটিয়া গায়ের চাম,/পাপোশ বানাইলেও ঋণের শোধ হবে না/এমন দরদী ভবে কেউ হবে না আমার মা গো...। মাকে নিয়ে এমন লেখা হয়েছে এমন শত সহস্র কবিতা, গান।
মা দিবসে যদিও সুনির্দিষ্ট কোনো আনুষ্ঠানিকতা দেখা যায় না। তবু অনেকে ঘরোয়াভাবে হয়তো দিনটি উদযাপন করবেন। ফুল দিয়ে মাকে বরণ করবেন। মায়ের মুখের হাসি দেখতে কোনো কাঙ্খিত উপহার হাতে তুলে দেবেন। মাকে ঘিরে ধরে কেক কাটবেন। কেকের গায়ে লেখা থাকবে ‘হ্যাপি মাদারস ডে।’
পৃথিবীর সকল মায়েরা সূখী হোক। সকল সন্তানেরা মায়ের প্রতি দায়িত্ব কর্তব্য ও প্রেমে যথাযথ ভূমিকা পালন করুক। সূরা বনিইসরাইলে আল্লাহ যেভাবে মায়ের প্রতি আচরণ করতে নির্দে শ দিয়েছেন, ‘তোমার প্রতিপালক নির্দেশ দিয়েছেন যে, তোমরা তিনি ছাড়া অন্য কারো উপাসনা করবে না এবং মা-বাবার প্রতি সদ্ব্যবহার করবে; তাদের এক জন অথবা উভয়েই তোমার জীবদ্দশায় বার্ধক্যে উপনীত হলে তাদেরকে (বিরক্তিসূচক শব্দ) ‘উঃ/উহ্/উফ’ বলো না এবং তাদেরকে ভৎর্সনা করো না; বরং তাদের সাথে বলো সম্মানসূচক নম্র কথা।’ (সুরা বনি ইসরাইল : আয়াত ২৩) তা যেন সকল সন্তানেরা স্মরনে রেখে মায়ের প্রতি নিষ্ঠাবান হতে পারেন তাই হোক এবারের মা দিবসের প্রত্যাশা।