চলতি বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মুখে ক্ষমতাচ্যুত হয়ে দেশত্যাগ করেন স্বৈরাচারী শেখ হাসিনা; পতন ঘটে তার সরকারের।
সরকারের পতনের পর আওয়ামী লীগের সাবেক মন্ত্রীদের ব্যাপক দুর্নীতি নিয়ে তদন্ত শুরু করেছে অন্তর্বর্তী সরকার। এই তালিকায় আছেন সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী এবং তার স্ত্রীও। এরই মধ্যে তাদের সব ব্যাংক অ্যাকাউন্ট জব্দ করার পাশাপাশি দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে দুদক।
অথচ বিদেশ ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা থাকলেও লন্ডনের রাস্তায় ঘুরে বেড়াতে দেখা গেছে সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরীকে।
আল জাজিরার অনুসন্ধানী সাংবাদিক জুলকার নায়েন সায়ের তার ফেরিভায়েড ফেসবুক আইডিতে দাবি করেছেন, সাইফুজ্জামান চৌধুরীকে লন্ডন শহরে ক্যাপ মাথায় দিয়ে লুকিয়ে ঘুরে বেড়াতে দেখা গেছে। ভিডিওতে দেখা যায়, হালকা সবুজ রঙের একটি ফুলহাতার টি শার্ট, মাথায় ক্যাপ পরে বীরদর্পে হাঁটছেন সাইফুজ্জামান।
ফেসবুক পোস্টে তিনি লিখেছেন, আল জাজিরাতে মিনিস্টার্স মিলিয়ন্স প্রচারের পর আমরা আরও একটি নতুন অনুসন্ধান করি, যেখানে সাইফুজ্জামান চৌধুরী এবং তার স্ত্রীর দুবাইতে ৩০০টির বেশি সম্পত্তি পাওয়া গেছে। সেখানে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ সরকারের সাবেক মন্ত্রী ও শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠ এই নেতার অর্থ পাচার ও দুর্নীতির অভিযোগ তদন্ত করা হচ্ছে। তাকে দেশ ছাড়তে নিষেধ করেছে আদালত। কিন্তু তিনি দেশে নেই, আমরা তাকে খুঁজে পেয়েছি।
বর্তমানে সেখানে তিনি ১ কোটি ৪০ লাখ ডলারের একটি বাড়িতে বসবাস করছেন বলে জানতে পেরেছে আলজাজিরার তদন্তকারী ইউনিট (আই-ইউনিট)। আই-ইউনিটের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সাইফুজ্জামান চৌধুরীকে লন্ডনে একটি বিলাসবহুল অ্যাপার্টমেন্ট ব্লকের পাশ দিয়ে হাঁটতে দেখা গেছে। হাঁটতে হাঁটতে তিনি দোকানে ঢুকছেন। সেখান থেকে বের হয়ে বসে বসে সিগারেট ফুঁকতে দেখা গেছে।
উল্লেখ্য, আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম আল জাজিরাতে সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরীর বিদেশে বিপুল পরিমাণ সম্পদ নিয়ে সংবাদ প্রকাশ করা হয়। গত সেপ্টেম্বরে সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী (জাভেদ)-এর দেশে বিদেশে বিপুল পরিমাণ সম্পদ নিয়ে প্রতিবেদন প্রচারিত হয় আল জাজিরাতে। সেখানে দেখা গেছে, তার সম্পদের বেশির ভাগই বিদেশে। সেখানে তিনি নিজের মতো করে বিশাল সম্পদের সাম্রাজ্য গড়ে তুলেছেন।
সাবেক এই মন্ত্রী আলজাজিরার আন্ডারকভার সাংবাদিকদের কাছে গর্ব করে বলেছিলেন, লন্ডন, নিউইয়র্ক ও দুবাইতে তার অ্যাপার্টমেন্ট রয়েছে। এছাড়া ২০১৬ সাল থেকে শুধু যুক্তরাজ্যেই ৩৬০টিরও বেশি বিলাসবহুল বাড়ি কিনেছেন তিনি।
এর পরেই দেশজুড়ে তোলপাড় শুরু হয়ে যায়। এরপর থেকেই তিনি গা ঢাকা দেওয়ার কারণে তিনি কোথায়, কীভাবে ছিলেন তা স্পষ্টত জানা যায়নি। তবে, কাতারভিত্তিক আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম আল জাজিরা তার সন্ধান পায়।
নতুন ফাঁস হওয়া তথ্যে দেখা গেছে, সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাইয়ে সাইফুজ্জামান চৌধুরীর সম্পত্তির সংখ্যা প্রাথমিকভাবে ধারণার চেয়েও বেশি বলে জানিয়েছে আলজাজিরা। ফাঁস হওয়া ২০২৩ সালের একটি নথিতে দেখা গেছে, সাইফুজ্জামান চৌধুরী সংযুক্ত আরব আমিরাতে আড়াইশোরও বেশি বিলাসবহুল অ্যাপার্টমেন্টের তালিকাভুক্ত মালিক, যার মূল্য ১৪ কোটি ডলারেরও বেশি। সেইসঙ্গে তার স্ত্রী রুখমিলা জামানও দুবাইতে ২ কোটি ৫০ লাখ ডলারেরও বেশি মূল্যের আরও ৫০টি সম্পত্তির তালিকাভুক্ত মালিক। দুজনের বিরুদ্ধেই বর্তমানে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) তদন্ত চলমান আছে। সামগ্রিকভাবে অনুমান করা হচ্ছে, বিশ্বজুড়ে ৬০০টিরও বেশি সম্পত্তির তালিকাভুক্ত মালিক এই জুটি।
উল্লেখ্য, ‘দ্য মিনিস্টার্স মিলিয়নস’ শিরোনামের অনুসন্ধানী প্রতিবেদনটি প্রকাশ করেছে আল জাজিরা। অনুসন্ধান করেছে আল জাজিরার অনুসন্ধানী দল ‘আই ইউনিট’।
প্রসংগত, চলতি বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মুখে ক্ষমতাচ্যুত হয়ে দেশত্যাগ করেন স্বৈরাচারী শেখ হাসিনা; পতন ঘটে তার সরকারের।
সরকারের পতনের পর আওয়ামী লীগের সাবেক মন্ত্রীদের ব্যাপক দুর্নীতি নিয়ে তদন্ত শুরু করেছে অন্তর্বর্তী সরকার। এই তালিকায় আছেন সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী এবং তার স্ত্রীও। এরই মধ্যে তাদের সব ব্যাংক অ্যাকাউন্ট জব্দ করার পাশাপাশি দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দেয় দুদক।