জুলাই বিপ্লবের একজন বীর শহীদ মীর মাহফুজুর রহমান মুগ্ধ । সম্প্রতি ‘মীর মুগ্ধ নামে কেউ মারা যায়নি’ কিংবা ‘মুগ্ধ ও স্নিগ্ধ একই ব্যক্তি’ দাবি করে একটি তথ্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়েছে। তবে ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া দাবিগুলো সম্পূর্ণ মিথ্যা বলে জানিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং।
গত বুধবার২০ নভেম্বর রাত থেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মুগ্ধর মৃত্যু নিয়ে একটি বিতর্কিত দাবি ছড়িয়ে পড়ে।
দাবি অনুযায়ী, মুগ্ধ ও স্নিগ্ধ আসলে একই ব্যক্তি এবং মুগ্ধ নামে কেউ ছিল না। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে মীর মুগ্ধ নামের কেউ শহীদ হননি।
তবে এসব দাবিকে মিথ্যা বলে জানিয়েছে ফ্যাক্ট চেক প্রতিষ্ঠান রিউমার স্ক্যানার বাংলাদেশ।
প্রতিষ্ঠানটি জানিয়েছে, মুগ্ধ ও স্নিগ্ধ পৃথক দুই ব্যক্তি। তারা দুজন যমজ ভাই। ওপেন সোর্স অনুসন্ধানের মাধ্যমে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচারিত মুগ্ধ ও স্নিগ্ধের একসঙ্গে তোলা অসংখ্য ছবি ও ভিডিওর বরাত দিয়ে এ তথ্য নিশ্চিত করেছে তারা।
মুগ্ধ ও স্নিগ্ধকে ঘিরে সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া সংশ্লিষ্ট দাবিকে গুজব বলে চিহ্নিত করে ‘Kholilur Rahman Saikat’ নামের একটি ফেসবুক আইডি থেকে একটি পোস্ট প্রচারিত হয়। ওই পোস্টে যুক্ত একটি ভিডিওতে মুগ্ধ ও স্নিগ্ধকে একই ফ্রেমে একসঙ্গে দেখা যায়।
গত ২৬ জুলাই ‘সাদিয়া ইসলাম মৌ’ নামের একটি ফেসবুক আইডি থেকে মুগ্ধকে স্মরণ করে একটি ছবি পোস্ট করা হয়। ছবিটিতে মুগ্ধ ও তার জমজ ভাই স্নিগ্ধকে একসঙ্গে দেখা যায়।
গত ২৯ জুলাই মীর মুগ্ধের মৃত্যুর বিষয়ে জাতীয় একটি দৈনিকে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে দুই জমজ ভাই মুগ্ধ ও স্নিগ্ধের একসঙ্গে ঘোরার সময় তোলা একটি ছবি পাওয়া যায়।
সাম্প্রতিক সময় ছাড়াও ২০১৮, ২০২২ এবং ২০২৩ সালে ফেসবুকে প্রচারিত মুগ্ধ ও তার জমজ ভাই স্নিগ্ধের একত্রে তোলা বিভিন্ন ছবি পাওয়া যায়।
গত ৫ আগস্ট মুগ্ধর বড় ভাই মীর মাহমুদুর রহমান দীপ্তর ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে প্রকাশিত একটি ভিডিওতে রিকশায় করে রক্তাক্ত অবস্থায় মুগ্ধকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার সময়কার দৃশ্য দেখা যায়। এর আগে গত ১৮ জুলাই ‘Jahidul Islam Shawon’ নামের একটি ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে মুগ্ধকে বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা ও স্কাউটের পতাকা দিয়ে আচ্ছাদিত অবস্থায় শায়িত করার সময়কার একটি ছবি পোস্ট করা হয়।
গত ১৯ আগস্ট ‘Heroes of 24’ নামের একটি ফেসবুক পেজে ‘মীর মাহফুজুর রহমান (মুগ্ধ)’ নামফলকযুক্ত কবরের একটি ছবি প্রকাশিত হয়। একই দিনে ভিন্ন একটি ফেসবুক পেজে মুগ্ধের কবর জিয়ারতের একটি ভিডিও পাওয়া যায়।
এর পর ১৮ অক্টোবর মুগ্ধের বড় ভাই মীর মাহমুদুর রহমান দীপ্ত তার ফেসবুক অ্যাকাউন্টে একই কবরের আরেকটি ভিডিও পোস্ট করেন। এসব পোস্ট থেকে জানা যায়, মীর মুগ্ধ রাজধানীর উত্তরার কামারপাড়া কবরস্থানে শায়িত আছেন।
এদিকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে আওয়ামী লীগপন্থী অ্যাক্টিভিস্ট ডাক্তার আইজুদ্দিন স্বীকার করেন যে, এই গুজবটি তিনি ইচ্ছাকৃতভাবে ছড়িয়েছেন।
উল্লিখিত তথ্যসমূহ বিশ্লেষণ করলে স্পষ্ট হয়, মীর মুগ্ধ ও মীর স্নিগ্ধ দুজন সম্পূর্ণ ভিন্ন ব্যক্তি এবং তারা জমজ ভাই। সুতরাং ‘মুগ্ধ এবং স্নিগ্ধ আসলে একই ব্যক্তি এবং মুগ্ধ নামে কেউ ছিল না’ শীর্ষক দাবিটি ভিত্তিহীন ও সম্পূর্ণ মিথ্যা।
জানা গেছে, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে শিক্ষার্থীদের পানি খাওয়াতে গিয়ে শহীদ হন বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালসের শিক্ষার্থী মীর মাহফুজুর রহমান মুগ্ধ। আন্দোলনের সময় গত ১৮ জুলাই রাজধানীর উত্তরার আজমপুরে সংঘর্ষ চলাকালে গুলিবিদ্ধ হয়ে তিনি মারা যান।