National Online News Portal of Bangladesh - বাংলাদেশের জাতীয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল - بوابة الأخبار الوطنية على الإنترنت لبنغلاديش - बांग्लादेश का राष्ट्रीय ऑनलाइन समाचार पोर्टल - بنگلہ دیش کا قومی آن لائن نیوز پورٹل
ছবি-সংগৃহিত

জীবন প্রবাহ : দৈনিক গণকন্ঠ : দুই পর্যায়ের স্মৃতি - সৌহার্দ্য আর রোমান্টিকতাপূর্ণ :বাবলু রহমান

  ।।বিকে ডেস্ক।।  শুক্রবার | মে ৩১, ২০২৪ | ০৪:৫৯ পিএম

"দৈনিক গণকন্ঠ : দুই পর্যায়ের স্মৃতি

সৌহার্দ্য আর রোমান্টিকতাপূর্ণ
-বাবলু রহমান

বাংলাদেশ তখন কেবল স্বাধীনতা অর্জন করেছে, ১৯৭১ সালের ১৬ই ডিসেম্বর। সম্পূর্ণ নতুন দেশে কিছুদিন পরই দৈনিক গণকন্ঠ নামে একটা নতুন সংবাদপত্র আলোর মুখ দেখে ১৯৭২ সালে । এবং বেশ ঝড়ের বেগে পাঠকের মণিকোঠায় জায়গা করে নেয়। নতুন দেশে তখন রাজনৈতিক আশা আকাঙ্খা স্বপ্ন অভিলাষ নিয়ে ভালো-মন্দ দুই রকমেরই টানাপোড়েন।
১৯৭২ আর ২০২৪ সাল। মাঝখানে ৫২ বছর। সেই সংবাদপত্র দৈনিক গণকন্ঠ নানা উঠতি-পরতির মাঝ দিয়ে এখনো টিকে রয়েছে-এটাই বড় কথা।
তবে কালের বিবর্তন, মুদ্রণ প্রযুক্তি তথা কম্পিউটার প্রযুক্তির প্রভূত অগ্রগতি এবং সংবাদপত্র অঙ্গনে তার যথেচ্ছ ব্যবহারের ফলে নানা রকমের অভিঘাতও সৃষ্টি হয়েছে। এর ফলে সংবাদপত্রের ভেতর-বাহির আর আগের মতো নেই। টিকে থাকা অন্য অনেক সংবাদপত্রের মতো দৈনিক গণকন্ঠও যে আগের সেই তরতাজা অবস্থায় নেই-এটা অকপট সত্যি কথা। এক কথায়, সংবাদমাধ্যম তথা সংবাদপত্র ভূবনে নানারকমের খরা কবলিত অবস্থা এখন।
তদুপরি এই সংবাদপত্রটি ৫৩ বছর উদযাপন অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে, একজন সংবাদকর্মী হিসেবে আমার কাছে এ সংবাদটি অতীব স্বস্তিদায়ক। আমার স্বস্তির আরেকটি কারণ হয়তো এই যে, এই পত্রিকাতে ১৯৮১-৮৩ সালে সহ সম্পাদক এবং ২০১১-১২ সালে বার্তা সম্পাদক হিসেবে দুই পর্যায়ে বিশেষভাবে জড়িয়ে ছিলাম। প্রথম পর্যায়ে অফিস ছিল ওয়ারী টিপু সুলতান রোডে আর দ্বিতীয় পর্যায়ে গ্রীন রোডে। সম্প্রতি নতুন অফিস হয়েছে বাংলামটর প্ল্যানার্স টাওয়ারে।
প্রথম পর্যায়ে আমার গণকন্ঠে যোগদানের সুযোগ হয় স্টাফ রিপোর্টার স্বপন দাশগুপ্তের হাত ধরে। বলা বাহুল্য, গণকন্ঠ স্বাধীনতার পর পর জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদ নামে সৃষ্ট নতুন রেডিক্যাল রাজনৈতিক দলের মুখপত্র হিসেবে পরিচিত ছিল। তখন এর সংবাদকর্মীদের বেশিরভাগই ছিল জাসদ ঘরানা তথা ছাত্রলীগ থেকে আগতরা। যদিও আমার রাজনৈতিক ঘরানা ছিল বিপরীত দিকের চৈনিক বামপন্থি নকশাল ধারা। শেষ দিকে দুই দশক ওয়ার্কার্স পার্টিতে থিতু হয়েছিলাম।
স্বপন দাশগুপ্তের সাথে তর্ক-বিতর্কের মাঝে এক ধরনের ঐক্য বা মিত্রতাও হয়তো ছিল। তাই স্বপন দাশগুপ্ত সেই মৈত্রীর সুবাদে দৈনিক গণকন্ঠের সম্পাদক মীর্জা সুলতান রাজার স্বাক্ষরসহ ওয়েজ বোর্ড রোয়েদাদ অনুযায়ী নিয়োগপত্রের ব্যবস্থা করে দেয়। এই নিয়োগপত্র হাতে পেয়ে আমি পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় পরিকল্পনা কমিশনের গবেষণা সংস্থায় সহকারী পদের সরকারী চাকরিটা ছেড়ে দিই হুট করে।
আমার আব্বা এ.কে.এম.মুসা ছিলেন দৈনিক ইত্তেফাকের দীর্ঘকালের নিজস্ব সংবাদদাতা-চুয়াডাঙ্গায়। সংবাদপত্রের হাড়ির খবর তিনি জানতেন মর্মে মর্মে। তাই সাংবাদিকতার মোহ আর আবেগের বশবর্তী হয়ে সরকারী চাকরি ছেড়ে দেওয়ার সিদ্ধান্তের কথা শুনেই তিনি নিষেধ করেন। পরে আমার সে ভুল সিদ্ধান্তের জন্য যারপরনাই মর্মাহত হন।
নিয়োগপত্র হাতে নিয়ে আমি স্বপনের সাথে সম্পাদকের কক্ষে ঢুকে দেখা করি এবং ধন্যবাদ জানাই। যদিও তিনি আমার পূর্ব পরিচিত এবং আমার এলাকা চুয়াডাঙ্গার অন্যতম রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব, পরে জাতীয় নেতা হন।
উল্লেখ্য, মীর্জ সুলতান রাজা জাসদের ভারপ্রাপ্ত সভাপতিও ছিলেন। চুয়াডাঙ্গার আরেক কৃতী সন্তান মোহাম্মদ শাজাহানও জাসদের সভাপতি ছিলেন। এ দু’জনই রাজনৈতিক জীবনের ধারাবাহিকতায় জাতীয় সংসদের এমপি হন।
১৯৭৮ সাল থেকে দৈনিক দেশবাংলা, দৈনিক জনপদে কাজ করলেও ১৯৮১ সালে গণকন্ঠেই প্রথম নিয়োগপত্র হাতে পায় আমি। পরে দৈনিক জনতা, ইনকিলাব, যায় যায় দিন, ফের ২০১১ সালে গণকন্ঠে বার্তা সম্পাদক হিসেবে নিয়োগপত্র পেয়েছি।
তবে ৪৬ বছরে সাংবাদিকতা পেশায় চাকরি ছিল অর্ধেক সময় অর্থাৎ ২৩ বছরের মতো। বাকিটা বেকার সময়ে এটা-সেটা করে জীবনপাত করতে হয়েছে। তখন সঙ্গী ছিল শুধু দীর্ঘশ্বাস । আর সরকারী চাকরি ছাড়তে আব্বার নিষেধের কথা মনে হতো বার বার।
গণকন্ঠে ১৯৮১-৮৩ সালের স্মৃতি খুবই উজ্জ্বল, সৌহার্দ্যপূর্ণ এবং রোমান্টিকতায় ভরপুর। রাজনৈতিক কড়চা তো ছিলই। বার্তা কক্ষে সাথে ছিল উপরি রঙএর নানান খোশ আড্ডা। এর আগের বছর কেবলমাত্র বিয়ে করে বউ নিয়ে এসেছি, থাকি ঢাকার রায়েরবাজারে। গণকন্ঠে একদিন কার হাতে যেন দেখলাম ‘রাত ভ’রে বৃষ্টি’, বুদ্ধদেব বসুর। ছোঁ মেরে নিয়ে গেলাম বাসায়। পড়েও ফেললাম গোগ্রাসের মতো। বইয়ের শেষ দিকে পড়ে মনটা খচ খচ করতে লাগলো। আমার ঘরে মানে ছোট্ট বাসায় নতুন বউ। আর বুদ্ধদেব বসু নায়কের বন্ধুর সাথে নায়িকাকে একান্তে মেলামেশা করিয়ে দিলেন! বউও একআধটু বইটই পড়া শুরু করেছে অফিস থেকে বাসায় নিয়ে যাওয়া সংবাদপত্রের পাশাপাশি। ‘রাত ভ’রে বৃষ্টি’টা যদি পড়ে ফেলে তাহলে তো হোচট খাবে!
সম্ভবত এর আগে বাংলা একাডেমির ত্রৈমাসিক উত্তরাধিকার বুদ্ধদেব বসু বিশেষ সংখ্যা বের করেছিল।
যাহোক, সে বই ব্যাগে নিয়ে অফিসে ফিরে বুদ্ধদেব বসুকে তুলোধোনা করে ছাড়লাম। তা দেখে সঞ্জয় বড়ুয়া, স্বপন দাশগুপ্ত আর খন্দকার মাজহারুল করিম নান্টু মজা নেয় আর নুন ছিটাতে থাকে। বার্তা সম্পাদক নজরুল হক ভাই অভয় দিয়ে বলেন, বাবলু ডোন্ট ওরি। পরে জেনেছি, নজরুল হক চিরকুমার।
রাত ভ’রে বৃষ্টি-তে নয়নাংশু আর মালতীর মনোবিশ্লেষণের সুক্ষ্মতা অসাধারণ বটে। তবে সাধারণের পক্ষে হজম করা কঠিন। যদিও শেষমেশ হাইকোর্টের বিচারপতিরা একে অশ্লীলতার দায় থেকে মুক্তি দিয়েছেন।
১৯৮১-৮৩ সালের সে সময়ে গণকন্ঠে আমি পেয়েছিলাম বার্তা সম্পাদক নজরুল হক, সহকারী সম্পাদক রমেন দত্ত, আলাউদ্দিন আহমদ, মোরশেদ শফিউল হাসান, শহীদ হাসান, শিফট ইনচার্জ মাশুক চৌধুরী, সোহরাব হাসান, অচিন্ত্য কুমার সেনগুপ্ত, সঞ্জয় বড়ুয়া, সিনিয়র সহ সম্পাদক খন্দকার মাজহারুল হক নান্টু, সুভাস সাহা, রঞ্জন দত্ত, সুধীর কুমার কৈবর্ত্য, রওশন জাহান সাথী, মাহফুজা মিলা, সিনিয়র রিপোর্টার সাঈদ তারেক, স্বপন দাশগুপ্ত, রফিকুল ইসলাম, আলী মামুদ, দেলোয়ার হোসেনসহ আরও অনেককে। মনে হতো সবার ওপরে ছায়া হয়ে আছেন আহমদ ছফা।
প্রবীণের সিড়িতে পা দিয়ে ফেলেছি। তাই কিছুটা স্মৃতিভ্রমের কারণে অনেক প্রিয় সহকর্মীর নাম মনেও করতে পারছি না। সেজন্য দু:খিত।
দৈনিক গণকন্ঠ পত্রিকায় ২০১১-১২ পর্বে নতুন প্রকাশক-সম্পাদক মোহাম্মদ নিজাম উদ্দিন জিটুর সান্নিধ্য ও আন্তরিকতার কথাও ভুলবার নয়। সেই আন্তরিকতার টানে তার সাথে এখনো যোগাযোগ ও কথাবার্তা হয় মন খুলে। তিনি বলেন, এ পত্রিকা আপনার। যখন-যেমন মন চাইলে চলে আসবেন গণকন্ঠে, এসে বসবেন, লিখবেন। পরামর্শ দেবেন কিভাবে করলে ভালো হয়-দেখাবেন।
এখনো মাঝেমধ্যে সম্পাদক জিটু ভাই আমন্ত্রণ জানান বাংলামটর প্ল্যানার্স টাওয়ারে গণকন্ঠের নতুন সুদৃশ্য অফিসে। গেলে একটা নিরলস আড্ডা হয়ে যায় নির্ভেজাল।"


লেখক : বাবলু রহমান। বার্তা সম্পাদক (সাবেক) । দৈনিক গণকন্ঠ। [email protected]

বিকে ডেস্ক : লেখক  একধিক পত্রিকায় ( গনকন্ঠ নয়) সম্পাদকের সাবেক সহকর্মী
,বন্ধু ও ফেইসবুক ফ্রেন্ড।সম্পাদকের দিক নির্দেশনায় লেখাটি জনাব বাবলু রহমান-র

ফেইসবুক-র ওয়াল থেকে সংগৃহীত