বাংলাদেশ-আফগনিস্তান তিন ম্যাচ ওয়ানডে সিরিজের প্রথম ম্যাচে পিছিয়ে পড়লেও ব্যাটার-বোলারদের নৈপুন্যে আফগানিস্তানের বিপক্ষে ২য় ম্যাচ জিতে সিরিজে সমতা ফেরালো বাংলাদেশ।
শনিবার ৯ নভেম্বর শারজায় সিরিজের দ্বিতীয় ওয়ানডেতে বাংলাদেশ ৬৮ রানে হারিয়েছে আফগানদের। এই জয়ের ফলে ১-১ এ সিরিজে সমতা বিরাজ করছে। প্রথম ওয়ানডে ৯২ রানে জিতেছিলো আফগানিস্তান।
১৯৯০ সাল থেকে শারজাহর মাঠে ৬টি ওয়ানডে ও ৩টি টি-টোয়েন্টি খেললেও, কখন জিততে পারেনি টাইগাররা। অবশেষে এই সিরিজের দ্বিতীয় ওয়ানডে জিতে শারজাহর মাঠে প্রথমবারের মত জয়ের দেখা পেল বাংলাদেশ। জয়ের সূচনা করলো নাজমুল হোসেন শান্তর দল।
টস জিতে প্রথমে ব্যাট করতে নামা বাংলাদেশকে ভালো শুরুর ইঙ্গিত দিয়েছিলেন ওপেনার তানজিদ হাসান তামিম। ইনিংসের প্রথম তিন ওভারে ৩টি চার মারেন তিনি। চতুর্থ ওভারে আগের ম্যাচের হিরো আফগানিস্তানের আল্লাহ গজানফারের প্রথম ডেলিভারিতে ছক্কা মারেন তানজিদ। কিন্তু পরের বলে মিড অনে মোহাম্মদ নবিকে ক্যাচ দিয়ে বিদায় নেন ১৭ বলে ২২ রান করা এই বাঁ-হাতি ওপেনার।
দলীয় ২৮ রানে তানজিদ ফেরার পর বাংলাদেশের রানের চাকা ঘুড়িয়েছেন আরেক ওপেনার সৌম্য সরকার ও অধিনায়ক শান্ত। নবম ওভারের দলের রান ৫০এ নিতে পারলেও, তিন অঙ্কের খুব কাছে গিয়ে বিচ্ছিন্ন হন তারা। দলীয় ৯৯ রানে স্পিনার রশিদ খানের বলে লেগ বিফোর আউট হন সৌম্য। রিভিউ নেওয়ার সুযোগ থাকলেও, নেননি তিনি। পরে টিভি রিপ্লেতে দেখা যায়, রশিদের ডেলিভারি লেগ স্টাম্পের লাইনের বাইরে পিচ করেছিলো। অর্থাৎ রিভিউ নিলে উইকেট বাঁচাতে পারতেন সৌম্য। ২টি করে চার-ছক্কায় ৪৯ বলে ৩৫ রান করেন তিনি। শান্তর সাথে জুটিতে ৯৩ বলে ৭১ রান যোগ করেন সৌম্য।
সৌম্যর পর তৃতীয় উইকেটে মেহেদি হাসান মিরাজের সাথেও হাফ-সেঞ্চুরির জুটি গড়েন শান্ত। এই জুটিতেই ৪৭ ম্যাচের ওয়ানডে ক্যারিয়ারে নবম ও আফগানিস্তানের বিপক্ষে দ্বিতীয় হাফ-সেঞ্চুরির স্বাদ নেন ৭৫ বল খেলা টাইগার দলনেতা।
শান্তর হাফ-সেঞ্চুরির পর ব্যক্তিগত ২২ রানে রশিদের গুগলিতে বোল্ড হন মিরাজ। পাঁচ নম্বরে ব্যাট হাতে নেমে সুবিধা করতে পারেননি তাওহিদ হৃদয়। বাঁ-হাতি স্পিনার নাঙ্গোলিয়া খারোতের বলে ডিপ স্কয়ার লেগে সেদিকুল্লাহ আতালকে ক্যাচ দেওয়ার আগে ১৬ বলে ১১ রান করেন হৃদয়।
হৃদয়কে শিকারের পর বাংলাদেশ শিবিরে জোড়া আঘাত হানেন খারোতে। ইনিংসের ৪১তম ওভারের দ্বিতীয় বলে শান্তকে ও পঞ্চম বলে মাহমুদুল্লাহ রিয়াদকে আউট করেন খারোতে। ক্রিজ থেকে বেরিয়ে ছক্কা মারতে গিয়ে লং-অফে ক্যাচ দেন শান্ত-মাহমুদুল্লাহ। ৬টি চার ও ১টি ছক্কায় ১১৯ বলে ৭৬ রান করেন শান্ত। ৯ বলে ৩ রান তুলে থামেন মাহমুদুল্লাহ।
৪১তম ওভারে দলীয় ১৮৪ রানে ষষ্ঠ উইকেট হারিয়ে বড় সংগ্রহের পথে বড় ধাক্কা খায় বাংলাদেশ। কিন্তু সপ্তম উইকেটে উইকেটরক্ষক জাকের ও নাসুমের ৪১ বলে ৪৬ রানের জুটিতে লড়াকু সংগ্রহের পথ পায় বাংলাদেশ।
আফগানিস্তানের পেসার ফজলহক ফারুকির করা ৪৭তম ওভারে জাকেরের দুই ছক্কা ও নাসুমের এক চারে ১৮ রান পায় বাংলাদেশ।
১টি চার ও ২টি ছক্কায় ২৪ বলে ২৫ রান করে গজানফারের বলে নাসুম বোল্ড হলেও ইনিংসের শেষ পর্যন্ত খেলে বাংলাদেশকে ৭ উইকেটে ২৫২ রানের পুঁজি এনে দেন জাকের। ১টি চার ও ৩টি ছক্কায় ২৭ বলে অনবদ্য ৩৭ রান করেন জাকের।
আফগানিস্তানের খারোতে ২৮ রানে ৩টি, গজানফার ও রশিদ ২টি উইকেট নেন।
জবাবে ২৫৩ রানের টার্গেটে খেলতে নেমে চতুর্থ ওভারেই উইকেট হারায় আফগানিস্তান। শারজাহর তুলনামূলক ধীরগতির উইকেটে বাংলাদেশের স্কোরটা ছিল বেশ চলনসই। স্কোরবোর্ডে ২৫২ রানের জুটি থেকে নির্ভার হওয়ার সুযোগ ছিল।
চতুর্থ ওভারে রহমানউল্লাহ গুরবাজকে ফিরিয়ে সেই ইঙ্গিতটাও দিয়ে রেখেছিলেন তাসকিন আহমেদ। পেসার তাসকিন আহমেদের বলে প্রথম স্লিপে সৌম্যর দারুণ ক্যাচে ২ রানে বিদায় নেন রহমানুল্লাহ গুরবাজ।
দ্বিতীয় উইকেটে ৭৬ বলে ৫২ রানের জুটিতে বাংলাদেশ ভক্তদের কপালে চিন্তার ভাঁজ ফেলেছিলেন সেদিকুল্লাহ আতাল এবং রহমত শাহ। মাঝে জাকের আলী অনিক স্ট্যাম্পের পেছনে স্ট্যাম্পিং এবং ক্যাচ দুইই ছেড়েছেন। ৫২ রানের সেই জুটি ভেঙেছেন নাসুম আহমেদ। মিরাজ নিয়েছিলেন দারুণ এক ক্যাচ।
অধিনায়ক হাসমতউল্লাহ শহিদী আর রহমত শাহর পরের জুটি ৪৩ রানের। তখনো আফগানিস্তানের হাতেই ছিল ম্যাচ।
যদিও দৃশ্যপট বদল হতে সময় লাগলো না খুব একটা। একটা উইকেট যেন অদৃশ্য সুতো হয়ে টান দিলো আরও দুই উইকেটকে। ১১৮ রানে হাসমতউল্লাহ আউটের পরেই নাসুমের ওভারে আফগানিস্তান হারালো আরও দুই উইকেট। ১১৮ রানে ২ উইকেট থেকে ১১৯ রানে ৫ উইকেট। বাংলাদেশ ম্যাচে ফেরে সেখানেই।
মোস্তাফিজুর রহমানের বলে ক্যাচ নিয়েছিলেন শরীফুল ইসলাম। হাশমতউল্লাহ চেয়েছিলেন বিগ শট খেলতে। কিন্তু ফাইন লেগে একেবারেই বাউন্ডারি লাইনে থাকা শরিফুলের হাতে জমা পড়ে ক্যাচ ক্যাচ। মোস্তাফিজ উইকেট পেয়েছিলেন পঞ্চম বলে। নাসুমের করা পরের ওভারে রহমত শাহ ১ রান নেন। এর পরের বলেই আজমতউল্লাহকে আউট করেন নাসুম।
সরাসরি বোল্ড হয়ে ফেরেন আজমতউল্লাহ। দুই বল বিরতি দিয়েই হাস্যকর রানআউট ফিফটি করা রহমত শাহ। ভুল বুঝাবুঝিতে দুই ব্যাটারই চলে যান অপরপ্রান্তে। জাকির বল ঠাণ্ডা মাথায় পাঠালেন এই প্রান্তে থাকা নাসুমের হাতে। ৬ বলের মাথায় নিজেদের তৃতীয় উইকেট পেল বাংলাদেশ। তবে ক্রিজে আগে গিয়েছিলেন গুলবাদিন। আউট হতে হয় রহমত শাহকে।
৬ বলে ১ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে আফগানিস্তান। গুলবাদিন বিধ্বংসী হওয়ার ইঙ্গিত দিয়েছিলেন। ১১৯ রানে ৫ উইকেট পতনের পর ৪১ বলে ৪৪ রানের জুটিতে আফগানদের লড়াইয়ে ফেরান গুলবাদিন নাইব ও নবি। নাইবকে ২৬ রানে শরিফুল ও নবিকে ১৭ রানে আউট করেন মিরাজ।
৩০তম ওভারে জোড়া উইকেট হারায় আফগানিস্তান। ওভারের দ্বিতীয় বলে আজমতুল্লাহ ওমরজাইকে দারুণ ডেলিভারিতে বোল্ড করেন নাসুম। গোল্ডেন ডাক মারেন ওমারজাই। ওভারের পঞ্চম বলে রান আউটের ফাঁদে পড়েন রহমত। ৫টি চারে ৫২ রান করেন তিনি।
শরীফুলের ওভারে তিন বলে এসেছিল ১২ রান। পরের বলেই অবশ্য শরিফুলের বুদ্ধিদীপ্ত চালে ক্যাচ দিলেন তাওহীদ হৃদয়কে। পরের ওভারেই মিরাজের দারুণ সুইংয়ে পরাস্ত মোহাম্মদ নবী। সরাসরি বোল্ডে ফিরতে হলো তাকে। রশিদ খানকে ফিরিয়েছেন মুস্তাফিজ। চিরচেনা স্লোয়ারে ক্যাচ দিতে বাধ্য করেছেন আফগান অলরাউন্ডারকে। আর শেষ উইকেট গিয়েছে নাসুমের ঝুলিতেই। আল্লাহ গাজানফারকে বোল্ড করে ৬৮ রানের জয় নিশ্চিত করেন এই স্পিনার।
১৬৫ রানে সপ্তম উইকেট হারানোর পর আর ঘুড়ে দাঁড়াতে পারেনি আফগানিস্তান। ৪৩ দশমিক ৩ ওভারে ১৮৪ রানে অলআউট হয় আফগানরা।
বাংলাদেশের পক্ষে নাসুম ২৮ রানে ৩টি, মিরাজ ও মুস্তাফিজ ২টি করে উইকেট নেন।
আগামী ১১ নভেম্বর একই ভেন্যুতে সিরিজের তৃতীয় ও শেষ ওয়ানডে খেলবে বাংলাদেশ ও আফগানিস্তান।