বিজয় দিবসে সুদূর ক্যারিবিয়ান দ্বীপ সেন্ট ভিনসেন্টে টানটান উত্তেজনার ম্যাচে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ৭ রানে হারিয়ে তিন ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজে ১-০ তে এগিয়ে গেল বাংলাদেশ।
সোমবার ১৬ ডিসেম্বর সেন্ট ভিনসেন্টের আর্নেস ভেলে স্টেডিয়ামে তিন ম্যাচ সিরিজের প্রথম টি-টোয়েন্টিতে আগে ব্যাট করে ৬ উইকেট হারিয়ে ১৪৭ রান করে বাংলাদেশ। জবাবে ১৯.৫ ওভারে ১৪০ রানে থামে ক্যারিবীয়রা। ৭ রানের জয় পায় বাংলাদেশ।
১৬ই ডিসেম্বরের সকালে দেশের মানুষের উৎসবের উপলক্ষ্যটা আরেকটু চওড়া হলো টিম টাইগার্সের শ্বাসরুদ্ধকর এক জয়ের সুবাদে। ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হারিয়ে দেশবাসীকে উপহার দিল ৭ রানের নাটকীয় এক জয়।
বাংলাদেশের হয়ে বল হাতে ৪টি উইকেট নেন স্পিনার শেখ মেহেদী।ব্যাট হাতে ভালো করতে না পাররেও বোলিং তোপে ওয়েস্ট ইন্ডিজের থেকে জয় ছিনিয়ে আনলো টাইগাররা। শেষ ওভারে জয়ের জন্য ক্যারিবীয়দের দরকার ছিল ১০ রান, হাতে ছিল ২ উইকেট। কিন্তু হাসান মাহমুদের বোলিং তোপে জয়ের দেখা পেল না স্বাগতিকরা।
ওভারের প্রথম বলে ১ রান দিলেও দ্বিতীয় বলটি হয় ডট। আর তৃতীয় বল অফ স্ট্যাম্পের বাইরে করা বলে লিটনের হাতে ক্যাচ দেন পাওয়েল। শেষ তিন বলে জয়ের জন্য ৯ রান প্রয়োজন ছিল ক্যারিবীয়দের। এরপর ব্যাটাররা চেষ্টা করলেও দলকে জেতাতে পারেননি।
শুরুতে ব্যাট করতে নেমে শুরুতেই আকিল হোসেনের জোড়া উইকেট শিকারে চাপে পড়ে যায় বাংলাদেশ। পাওয়ারপ্লের শেষ ওভারে ফিরে যান আফিফ হোসেনও। ৩ উইকেটের পতনে বেশ চাপেই পড়ে যায় বাংলাদেশ।
সেখান থেকে দলকে পথ দেখান জাকের আলী অনিক এবং সৌম্য সরকার। দুজনের ৪২ বলে ৫৭ রানের জুটিতে অবশ্য দুশ্চিন্তা বাড়িয়েছিল ডটবল। সেই তাগিদেই বড় শট খেলতে গিয়ে দুর্ভাগ্যের আউট হয়েছিলেন জাকের। বাউন্ডারি লাইনে দারুণ এক ক্যাচে ফিরতে হয়েছিল তাকে। এরপরেই ফিরে যান সৌম্য সরকারও। যদিও সেটা বাংলাদেশের জন্য শাপেবর হয়েই ধরা দেয়।
১ বছর পর জাতীয় দলের হয়ে খেলতে নেমেই দারুণ ব্যাটিং করেছেন শামীম পাটোয়ারী। তার ২৭ রানের ক্যামিও ইনিংসে ছিল ৩ ছক্কা আর ১ চার। শেষ ৫ ওভারে বাংলাদেশ যোগ করেছেন ৫১ রান। সেটাই স্কোরকে নিয়ে যায় ১৪৭ পর্যন্ত। পরবর্তীতে আর্নেস ভ্যালি স্টেডিয়ামে সেটাই বাংলাদেশের জয়ের জন্য যথেষ্ট হয়ে যায়।
জবাবে ১৪৮ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে ২ রান তুলতে ২ উইকেট হারায় স্বাগতিকরা। দ্বিতীয় ওভারের প্রথম বলে তাসকিন আহমেদ বোলিংয়ে এসে আউট করেন ব্রেন্ডন কিংকে। পরের ওভারে স্পিনার মাহেদী হাসান তুলে নেন নিকোলাস পুরানের উইকেট। এগিয়ে এসে অফস্পিনারকে উড়াতে চেয়ে স্টাম্পড হন পুরান।
চতুর্থ ওভারে তানজিম হাসানের বলে দুই ছক্কা, এক চারে দারুণ কিছুর আভাস দিয়েছিলেন জনসন চার্লস। পরের ওভারে শেখ মেহেদি হাসানের বলেও তিনি মারেন বাউন্ডারি। তবে তাকে বেশি দূর যেতে দেননি শেখ মেহেদি হাসান। মিড অফের ওপর দিয়ে মারার চেষ্টায় বৃত্তের মাথায় দাঁড়ানো হাসান মাহমুদের হাতে ক্যাচ দিলেন চার্লস। ১২ বলে ২০ রান করে ফেরেন তিনি।
দুর্দান্ত বোলিংয়ের ধারা অব্যাহত শেখ মেহেদি হাসানের। সপ্তম ওভারে আন্দ্রে ফ্লেচারকে ফিরিয়ে দিলেন অফ স্পিনার। অফ স্টাম্পের বাইরের ডেলিভারি দূর থেকে ড্রাইভ করার চেষ্টায় ফ্লেচারের ব্যাটের বাইরের কানা ছুঁয়ে যায়। উইকেটের পেছনে দারুণ ক্যাচ নেন লিটন কুমার দাস। রানের খাতাই খুলতে পারেননি ফ্লেচার। এরপর আকিলের বিদায়ে ৬১ রানে ৭ উইকেট হারায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ। মনে হচ্ছিল খুব সহজেই ম্যাচ জিততে যাচ্ছে বাংলাদেশ।
তবে, অধিনায়ক রোভম্যান পাওয়েল একাই ম্যাচের গতিপথ বদলে দেন। রোমারিও শেফাডকে নিয়ে গড়েন ৬৭ রানের দারুণ এক জুটি। খেলেন একের পর এক বড় শট। তবে, শেষমেশ আর দলকে জেতাতে পারেননি তিনি।
হাসান মাহমুদের শেষ ওভারে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিতে বাধ্য হলেন তিনি। সেখানেই মূলত জয়টা নিশ্চিত হয়ে যায় লাল-সবুজের প্রতিনিধিদের জন্য। এরপর এক বল বিরতি দিয়ে বোল্ড আলজারি জোসেফ। তাতেই নিশ্চিত দারুণ এক জয়।