দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজ ১-১ সমতায় শেষ হওয়ার পর ওয়ানডে সিরিজে ৩-০ ব্যবধানে হোয়াইটওয়াশ হয় বাংলাদেশ। সেন্ট কিটসের সেই লজ্জার প্রতিশোধ সেন্ট ভিন্টসেন্টে তুলল টাইগাররা। ৩ ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজের সবকয়টি জিতে ক্যারিবিয়ানদের হোয়াইটওয়াশ করল লিটন দাসের দল।
শুক্রবার ২০ ডিসেম্বর সেন্ট ভিনসেন্টে টস জিতে আগে ব্যাট করতে নেমে নির্ধারিত ২০ ওভারে ৭ উইকেট হারিয়ে ১৮৯ রান সংগ্রহ করে বাংলাদেশ। জবাবে খেলতে নেমে ১৬ ওভার ৪ বলে ১০৯ রানে অলআউট হয় ওয়েস্ট ইন্ডিজ।
সিরিজের প্রথম দুই ম্যাচ জিতে আগেই সিরিজ নিশ্চিত করেছিল বাংলাদেশ। আজ ওয়েস্ট ইন্ডিজের জন্য শেষ ম্যাচ ছিল মান বাঁচানোর লড়াই। ঘরের মাঠে ক্যারিবিয়ানরা সেটা রক্ষা করতে পারল না। শেষ ম্যাচে ৮০ রানের ব্যবধানে উইন্ডিজকে হারিয়েছে বাংলাদেশ।
ফলে তিন ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে প্রথমবারের মতো হোয়াইটওয়াশ করল টাইগাররা।
শুরুতে বাংলাদেশ প্রথমে ব্যাট করে নির্ধারিত ২০ ওভারে ৭ উইকেট হারিয়ে ১৮৯ রান করে। জবাব দিতে নেমে নির্ধারিত ২০ ওভারের ২০ বল আগেই ১০৯ রানে গুটিয়ে যায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ।
এদিন ১৯০ রানের বিশাল লক্ষ্যে তাড়া করতে নেমে শুরুতেই হোঁচট খায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ইনিংসের দ্বিতীয় বলেই সাজঘরে ফেরেন ব্যান্ডন কিং। ৫ বলে ৬ রান করে ফেরেন জাস্টিন গ্রেভস। ইনিংস বড় করতে পারেননি নিকোলাস পুরানও।
১০ বলে ১৫ রান করেন তিনি। খালি হাতে ফেলেন রোস্টন চেজও। এরপর ২৩ রান করে জনসন চালর্স রান আউট হলে দলীয় ৪৬ রানে ৫ উইকেট হারিয়ে বিপাকে পড়ে ক্যারিবিয়ানরা। এরপর রভম্যান পাওয়েল (২), গুঁড়াকেশ মোতি (১২), আলজারি জোসেফ ১ রান করে উইকেট মিছিলে যোগ দেন।
শুরু থেকেই উইকেট হারাতে থাকে ক্যারিবিয়ানরা। দলীয় ৬০ রানে ষষ্ঠ ব্যাটার হিসেবে রোভম্যান পাওয়েল ফিরলে মহাবিপদে পড়ে স্বাগতিকরা।
তবে এক প্রান্ত আগলে রেখে লড়াই করতে থাকেন রোমারিও শেফার্ড। সপ্তম উইকেটে কিছুটা প্রতিরোধ গড়ার চেষ্টা করেন রোমারিও শেফার্ড ও গুড়াকেশ মোতি। তবে রিশাদ হোসেনের দুর্ধর্ষ স্পিনে সেটিও ৩৫ রানের বেশি স্থায়ী হয়নি। ২৭ বলে ৩৩ রান করে এই ডান হাতি ব্যাটার আউট হলে ম্যাচ থেকে ছিটকে যায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ৪ রান করে ওবেদ ম্যাকয় আউট হলে ২০ বল হাতে থাকতে ১০৯ রানে গুঁটিয়ে যায় স্বাগতিকরা। এতে ৮০ রানের জয় পায় বাংলাদেশ।
বাংলাদেশের হয়ে সর্বোচ্চ ৩ উইকেট শিকার করেন রিশাদ হোসেন। তাসকিন আহমেদ এবং মাহেদী হাসান নেন দুটি করে উইকেট। এ ছাড়াও তানজিম সাকিব এবং হাসান মাহমুদ শিকার করেন একটি উইকেট।
এর আগে, বাংলাদেশের ১৮৯ রান করার পেছনে ছিল জাকের আলীর দানবীয় ব্যাটিং। ৪১ বলে ৭২ রানের দানবীয় ইনিংস খেলে অপরাজিত থাকেন পুরো সফরজুড়েই ফর্মে থাকা জাকের। ৩টি চারের সঙ্গে তার দ্বিগুণ ছক্কা হাঁকান এই ডানহাতি ব্যাটার। জিততে হলে এই মাঠে টি-টোয়েন্টিতে সর্বোচ্চ রান তাড়া করে জিততে হতো ওয়েস্ট ইন্ডিজকে।
ওয়েস্ট ইন্ডিজের এই মাঠে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ সংগ্রহ আজকের রানই। এর আগে সর্বশেষ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে ৫ উইকেটে ১৫৯ রান তুলেছিল বাংলাদেশ। এতদিন সেটাই ছিল সর্বোচ্চ।
আজ টস জিতে ব্যাটিং বেছে নিয়েছিলেন বাংলাদেশের অধিনায়ক লিটন। ব্যর্থতা কাটিয়ে এদিন ফর্মে ফেরার ইঙ্গিত দিয়েছিলেন তিনি। তবে ১৪ রান তুলেই রোমারিও শেফার্ডের বলে ক্যাচ দেন অধিনায়ক। তবে দারুণ খেলেছেন চোট জর্জরিত সৌম্য সরকারের জায়গায় ওপেনিংয়ে নামা পারভেজ হোসেন ইমন। ২১ বলে ৪টি চার ও ২ ছক্কায় ৩৯ রান করেন তিনি।
তিনে নেমে তানজিদ হাসান তামিম রান না পেলেও ২৩ বলে ২৯ রান করে দারুণ অবদান রেখেছেন চারে নামা মেহেদী হাসান মিরাজ। এদিন পাঁচে নামেন জাকের। ছয় ও সাত নম্বর ব্যাটার শামীম হোসেন পাটোয়ারি ও শেখ মেহেদী হাসান দুজনই রান আউট হলে কিছুটা বিপদে পড়েছিল বাংলাদেশ। বাংলাদেশের রান তখন ৬ উইকেট হারিয়ে ১১৪। তবে তানজিম হাসান সাকিবকে নিয়ে সব শঙ্কা উড়িয়ে দিয়ে বাংলাদেশকে বড় সংগ্রহের দিকে নিয়ে যান জাকের।
শেষ ১০ ওভারে ৪ উইকেট হারিয়ে ১১৩ রান তুলেছে বাংলাদেশ। এর মধ্যে জাকেরের অবদানই ৩৫ বলে ৬৮। আর সংক্ষেপে হিসেবে করলে শেষ ৫ ওভারে ১ উইকেটে ৭৫ রান তুলেছে বাংলাদেশ। জাকের একাই তুলেছেন ২৩ বলে ৫৪। এর মধ্যে আলজারি জোসেফের করা শেষ ওভারে ৩টি ছক্কা হাঁকান জাকের। ১৯তম ওভারের শেষ বলে আউট হওয়ার আগে ১২ বলে ১৭ রান করেছেন তানজিম।
দলের হয়ে ৪১ বলে সর্বোচ্চ অপরাজিত ৭২ রান করে ম্যাচ সেরা হন জাকের আলি। এবং সিরিজ সেরা হন মেহেদি হাসান মিরাজ ।