সনাতন ধর্মালম্বীদের ধর্মীয় ও সামাজিক উৎসব হলো দুর্গাপূজা। প্রতি বছর আশ্বিন মাসের শুক্লপক্ষের ষষ্ঠ থেকে দশম দিন পর্যন্ত বাঙালি হিন্দুরা দুর্গাপূজা পালন করেন।
একসময় নারীরা দুর্গাপূজা এলে লাল পেড়ে সাদা শাড়ি কিংবা জামদানিতে সেজে একে অপরের পায়ে আলতা দিয়ে মেতে উঠতো পূজার কাজে।
হিন্দুশাস্ত্র অনুযায়ী, আলতা ও সিঁদুর পবিত্রতার প্রতীক। ধারণা করা হয়, সিঁদুর আলতার লাল আর কাশফুলের সাদা- এই থেকেই এসেছে দুর্গাপূজায় লাল সাদার চলন। তবে এখন পূজার ফ্যাশনে অনেক পরিবর্তন এসেছে। এখনও পূজার ফ্যাশনে লাল, সাদার আধিক্য আছে, তবে এখন নারীরা দুর্গাপূজায় অন্য রঙের পোশাকও পরেন।
দোপিয়ান, মসলিন, সুতি, ভয়েল, গরদ ও বিভিন্ন ধরনের সিল্কের কাপড়ের শাড়ি, পাঞ্জাবি, ফতুয়া, সালোয়ার কামিজে বিভিন্ন সাজে দেখা যায়। আধুনিক,সনাতনী কিংবা ঐতিহ্যবাহী যে কোনোভাবেই নিজেকে সাজিয়ে তোলার জন্য বাঙালিদের কাছে দুর্গাপূজা একটি অন্যতম মাধ্যম। প্রতিটা দিনেই ভিন্ন ভিন্ন সাজে নিজেকে দেখার সুযোগ থাকে এই পূজার উৎসবে।
ষষ্টীর দিনে পূজার সাজ
পূজার শুরুটা হয় মূলত ষষ্ঠীর দিন থেকে । ষষ্ঠী পূজার দিনে ছিমছাম সাজ মানিয়ে যাবে ভালো।
বেশিরভাগ মানুষ পূজার শুরুতেই নিজের পরিবারে সময় দিয়ে থাকেন আর মন্ডপে প্রতিমা দেখতে বের হন। তাই হালকা সাজের মধ্যে এই দিনটাকে কাটানো যায়। পোশাকের ক্ষেত্রে বিভিন্ন রঙের তাঁতের শাড়ি বেছে নিন। অথবা পরতে পারেন কুর্তি কিংবা কামিজ। শরতের ঝকঝকে আসমানি রঙ বেঁছে নিতে পারেন। উপাদান নরম সুতি বা জর্জেট রাখতে পারেন বৃষ্টির কথা মাথায় রেখে। এই শাড়ির বা কুরতি-কামিজের সাথে সাদা মুক্তোর মালা আর চুল বাঁধার ক্ষেত্রে স্বস্তিকে প্রাধান্য দেবেন। চাইলে সৌন্দর্য বৃদ্ধিতে চুলে দুই-একটি ফুলও গুঁজে নিতে পারেন।
সপ্তমীর দিন পূজার সাজ
সপ্তমীর দিনে কিছুটা ভিন্নতা আনতে চাইলে উজ্জ্বল কোনো রঙ বাছুন শাড়িতে, সবুজ, টিয়া রঙ, কমলা বা লালচে কোনো রঙ। এক রঙের শাড়ি আর প্রিন্টের বা লেইস বসানো ব্লাউজ পরা যায়। আগের দিন বেণি করলে এদিন খোঁপা করে নিতে পারেন। কিংবা ছেড়ে দেয়া চুলেই এক পাশে ফুল গুঁজে দিন। কানে বড় ঝোলা দুল আর হাতে চুড়ি, গলা না হয় খালিই থাকুক। ঠোঁটে হালকা রঙের লিপস্টিক। রাতের সাজ ভারী রাখতে চাইলে চোখে আইশ্যাডো লাগাতে পারেন। সপ্তমীতে ঘুরে বেড়ানো হলে গয়না হালকা রাখাই ভালো।
অষ্টমীর দিন পূজার সাজ
অষ্টমীতে সন্ধি পূজা ও কোথাও কোথাও কুমারী পূজা হয়। সন্ধিপূজার থালা সাজায় মেয়েরা। তাই অষ্টমীর সাজ হওয়া উচিত একেবারে নিজস্ব ঢঙে।
সকালের অঞ্জলিতে কিংবা সন্ধিপূজায় সাধারণত লাল শাড়ি মানানসই। কাতান সাদার সাথে লাল পাড়ের শাড়ি পরার প্রচলন আছে অষ্টমীতে। আঁচলে বেশি কাজ আছে এমন লাল পাড়ের শাড়ি একপ্যাঁচ করেও পরতে পারেন। কপালে বড় লাল টিপ, গাঢ় লাল লিপস্টিক, চোখে কাজল ও হাতের পলায় নিজেকে সাজাতে পারেন। শাড়ি পরতে না চাইলে সালোয়ার কামিজ কিংবা হাতের কাজের নকশা করা কুর্তা ও ফতুয়ার সঙ্গে লেগিংস বা জিনস পরতে পারেন।
শাখা পরলে সঙ্গে সোনার গয়নাও ভালো মানাবে। চুল সামনের দিকে সেট করে পেছনে কার্ল করে ছেড়ে রাখলে ভাল দেখাবে। কানের পেছনে গুঁজে দিতে পারেন বেলি ফুলের মালা। অষ্টমীর রাতে কমবেশি সবাই ঘুরতে যান। রাতের সাজটা হয় জমকালো। রাতের সাজে ভারী কাজের সিল্ক, কাতান ও মসলিনের কাপড় বেছে নিতে পারেন।
রাতের সাজের গয়নাও ভারি হতে হবে। যেহেতু পূজায় ঘুরতে বের হলে অনেক হাঁটতে হয়, তাই আরামদায়ক স্যান্ডেল পরতে হবে। এজন্য বেছে নিতে পারেন স্লিপার।
নবমীর দিন পূজার সাজ
নবমীর দিন সকালে মন্দিরের পূজা অর্চনা শেষ করে অনেকেই বাইরে ঘুরতে বের হন। কারণ দশমীতে প্রত্যেকের বাসায় অনেক কাজ থাকে যার ফলে বাইরে যাওয়ার সুযোগ হয়না। বিকেলে ঘুরতে বের হলে অবশ্যই পোশাকে থাকবে রঙের আধিক্য।
রং বৈচিত্র্যপূর্ণ পোশাক, ভারি গহনা, ভারি মেকআপ, বাহারি চুলের সাজ ও তাজা ফুল এদিনের সাজের অনুষঙ্গ হয়ে ওঠে।এই দিনে গোলাপি জামদানিটা কিংবা মেরুন রঙের সিল্কের শাড়িটা পরা যেতে পারে অনায়াসেই। তার সঙ্গে বিভিন্ন প্যাটার্নের ব্লাউজ।
একইভাবে সালোয়ার কামিজের ক্ষেত্রে কামিজটা ঠিক রেখে ওড়না ও সালোয়ারের পরিবর্তনে সাজে আসতে পারে ভিন্নতা। আজকাল নবমীর সাজে মেকআপের চেয়ে গয়নাকে প্রাধান্য দেন অনেকেই। এথনিক জুয়েলারি এদিন ঐতিহ্যের সঙ্গে আধুনিক আমেজ আনবে।
বিদায়ী সাজ হউক দশমীর দিন পূজার সাজ
দুর্গাপূজার বিশেষ আকর্ষণ থাকে দশমীর দিনে। সিঁদুর খেলায় সবাই মেতে ওঠে দশমীতে। বলা হয় পূজার প্রাণ হল এই বিজয়াদশমী। দশমীতে ঐতিহ্যবাহী পোশাক প্রাধান্য পায়। দশমীর সাজ মানে লাল পাড়ের সাদা শাড়ি, লাল রঙের শাড়ি কিংবা সাদা জামদানী আর হাতে নকশা করা গাঢ় লাল ব্লাউজ। গতানুগতিক লাল ব্লাউজের বদলে অন্যান্য রং ও ডিজাইনের ব্লাউজও পরতে পারেন। দশমীতে এক প্যাঁচে শাড়ি পরার প্রচলন আছে।
সামনের দিকের চুলগুলো পেঁচিয়ে পেছনে নিয়ে খোঁপা করতে পারেন। এছাড়া লাল, সাদা শাড়ির সঙ্গে মানাবে ঘাড়ের কাছে আলগা হাতখোঁপা। খোঁপায় জড়িয়ে নিতে পারেন সাদা ফুল।
দশমীতে সোনা পরতেই হবে এমন কোনো কথা নেই। হালকা সোনার গয়না মানানসই বিসর্জনের দিন সাজে। কিংবা ভারি রূপার গয়নাও মন্দ নয়। সিথির সিঁদুর একটু গাঢ় রাখলেই ভালো মানাবে।
চোখজোড়া সাজিয়ে তুলুন উজ্জ্বল রঙে। চুলের খোঁপায় দিয়ে দিন ফুলের গুচ্ছ। গালে ব্লাশন আর ঠোঁটে গাঢ় রঙের লিপস্টিক একদম পরিপূর্ন করে তুলবে আপনার দশমীর সাজ।
শেষকথা ষষ্ঠী থেকে দশমী- দুর্গাপূজা পাঁচদিন হওয়ায় মনের মতো সাজার সুযোগ থাকে। তবে সাজতে হবে আপনার রুচি, স্বাচ্ছন্দ্যবোধ ও ব্যক্তিত্বের সঙ্গে মিলিয়ে।
সবাইকে শারদীয়া শুভেচ্ছা।