National Online News Portal of Bangladesh - বাংলাদেশের জাতীয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল - بوابة الأخبار الوطنية على الإنترنت لبنغلاديش - बांग्लादेश का राष्ट्रीय ऑनलाइन समाचार पोर्टल - بنگلہ دیش کا قومی آن لائن نیوز پورٹل
ছবি: প্রতীকি অর্থে

ফ্যাটি লিভার থেকে বাঁচুন: বদলে নিন খাবারের মেন্যু, জীবন যাপন ষ্টাইল

  ।।বিকে ডেস্ক।।   বুধবার | ফেব্রুয়ারি ২৮, ২০২৪ | ০১:৩৩ পিএম

উপস্থাপনা ও সম্পাদনা: তাইয়্যেবা মারজান 

আমাদের শরীরে সকল অংগের মতোই লিভারও একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি অঙ্গ। এই অঙ্গ খাবার হজমে, এনার্জি ধরে রাখতে, শরীর থেকে বিষ বের করে দিতে সাহায্য করে। নানা কারণে আমাদের লিভার ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। ক্ষতির অন্যতম একটা হলো লিভারে ফ্যাট জমে যাওয়া বা ফ্যাটি লিভারে আক্রান্ত হওয়া।

ফ্যাটি লিভার কি?

আমরা অনেকেই খাবারের কোনো নির্দিষ্ট সময় বা রুটিন মেনে চলি না, শরীরচর্চার প্রসঙ্গ এলে নানা অজুহাতে এড়িয়ে যাই। দীর্ঘ সময় অনিয়মের কারণে এতে ফ্যাটের আস্তরণ পড়তে থাকে। ফলস্বরূপ লিভারে চর্বি জমতে থাকে। এই অতিরিক্ত চর্বি জমা হওয়াকে ফ্যাটি লিভার বলা হয়।

ফ্যাটি লিভার দুই ধরনের হয়। অ্যালকোহলযুক্ত ফ্যাটি লিভার, অন্যটি অ্যালকোহলমুক্ত ফ্যাটি লিভার। প্রচুর অ্যালকোহল পান করলে লিভারে চর্বি জমা হতে পারে। এটি হলো অ্যালকোহলযুক্ত ফ্যাটি লিভারের কারণ।

অ্যালকোহলমুক্ত ফ্যাটি লিভার অস্বাস্থ্যকর জীবনযাপন, স্থূলতা বা টাইপ ২ ডায়াবেটিসের কারণে হয়। স্ট্রেস এখানে আরেকটি কারণ যা লিভারে চর্বি জমা হওয়ার সম্ভাবনা বাড়িয়ে তুলতে পারে।

মারাত্মক অসুখ হলেও ফ্যাটি লিভার নিয়ে মানুষের মধ্যে সচেতনতা অনেক কম। শুরুর দিকে এই রোগের লক্ষণ খুব বেশি বোঝা যায় না। কিন্তু এই সমস্যা থেকে লিভার সিরোসিস, লিভার ফেলিওর হতে পারে। যে কারণে সতর্ক হওয়া জরুরি। কারণ ইদানিং ফ্যাটি লিভার নামক নীরব ঘাতক ছড়িয়ে পড়ছে দ্রুতই।

এই অসুখের তেমন কোনো চিকিৎসা নেই। জীবনযাপনে কিছু পরিবর্তন আনার মাধ্যমে ফ্যাটি লিভার রোধ করা সম্ভব। একবার অসুখ দেখা দিলে চিকিৎসকের পরামর্শে ওষুধ খাওয়ার পাশাপাশি খাবারের তালিকায় পরিবর্তন আনতে হয়। কিছু খাবার রয়েছে যেগুলো ফ্যাটি লিভারের ক্ষেত্রে উপকারী। চলুন জেনে নেওয়া যাক-

বদলে নিন খাবারের মেন্যু: 

 

হালকা গরম পানি ও লেবুর রস দিয়ে দিন শুরু করুন

লেবুতে এমন অ্যাসিড রয়েছে যা পাকস্থলীতে হজমের তরল নিঃসরণকে উদ্দীপিত করে। লেবুতে ফ্ল্যাভোনয়েড রয়েছে যা অক্সিডেটিভ ক্ষতি কমায়। এদিকে হালকা গরম পানি পান করলে তা খাবার দ্রুত ভাঙতে সাহায্য করে। এছাড়াও হালকা গরম পানি কোষ্ঠকাঠিন্য এবং টক্সিন দূর করতে সহায়তা করে।

পুর ও রাতের খাবারে ৫০% শাক-সবজি রাখার কথা বলছেন বিশেষজ্ঞ পুষ্টিবিদগণ। এতে থাকতে পারে বিভিন্ন ধরনের শাক-সবজি। সালাদ, তরকারি, ভাজা, স্যুপ, চাটনি, ল্যাকটো-ফার্মেন্টেড সবজি, ডাল এবং রুটিতে এসব শাক-সবজি রাখতে পারেন।

প্রতিদিন কিছু ফার্মেন্টেড ফুড

ফার্মেন্টেড ফুড বা গাঁজানো খাবার হজমের জন্য সহায়ক। এটি শরীরের পুষ্টি শোষণ করার ক্ষমতাও উন্নত করে। এ ধরনের খাবার অন্ত্রের স্বাস্থ্য ভালো রাখে। বার বার খাবারের ইচ্ছা কমিয়ে দেয়। তাই প্রতিদিনের খাবারের তালিকায় এ ধরনের একটি খাবার রাখুন।

বেশি ফাইবার খান

ফাইবার বেশি খেলে তা অন্ত্রের মাইক্রোবায়োটা উন্নত করে যা লিভারের ক্ষতি এবং প্রদাহ কমায়। এ জাতীয় খাবার নিয়মিত খাওয়ার ফলে লিভারের অতিরিক্ত চর্বি দ্রুত কমে আসে। তাই প্রতিদিনের খাবারের তালিকায় অবশ্যই ফাইবারযুক্ত খাবার রাখবেন।

বেকড খাবার বাদ দিন

বেকড খাবার যেমন ব্রেড, বিস্কুট, কেক ইত্যাদি প্রতিদিনের খাবারের তালিকা থেকে বাদ দিতে হবে। এ ধরনের খাবার রক্তে গ্লুকোজের মাত্রার বৃদ্ধি ঘটায়, যার ফলে লিভারে চর্বি জমা হয়।

কাঁচা রসুন খান

বিভিন্ন রোগ থেকে দূরে রাখতে রসুনের জুড়ি নেই। রসুনে অ্যালিসিন নামক একটি যৌগ থাকে যা লিভারের প্রদাহ কমায়। ওয়েব মেড জানাচ্ছে, রসুন ফ্যাটি লিভার রোগীদের জন্যও ভীষণ উপকারী। ২০১৬ সালের একটি গবেষণায় দেখা গেছে, ফ্যাটি লিভার নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারে রসুন।

এই মসলা ওজন কমাতে পারে বলে নন অ্যালকোহোলিক ফ্যাটি লিভার ডিজিজে ভীষণ উপকার পাওয়া যায়। তাই ফ্যাটি লিভার থেকে বাঁচতে নিয়মিত রসুন খেতে পারেন। প্রতিদিন প্রায় ১-৩ গ্রাম কাঁচা রসুন খাওয়ার অভ্যাস করুন। এতে ফ্যাটি লিভার থেকে রক্ষা পাওয়ার পাশাপাশি আরও অনেক উপকার পাবেন।

ক্রুসিফেরাস সবজি খান

এগুলি মূলত ফুলধারণকারী সবজি যার ফুলোগুলোর পাপড়ি একটা কোণাকুণি আকারে সাজানো থাকে।  ফুলকপি, ব্রকলি, বাঁধাকপি, ব্রাসেল স্প্রাউট, বোকচয়, কলার্ড গ্রিনস, চাইনিজ বাঁধাকপির মতো ক্রুসিফেরাস সবজি রাখতে পারেন প্রতিদিনের খাবারে। এ ধরনের খাবারে সালফার যৌগ থাকে যা লিভারে ডিটক্সিফিকেশন প্রক্রিয়ায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এগুলিতে ‌‘ইন্ডোল’ নামক একটি যৌগ রয়েছে যা লিভারে প্রদাহ কমাতে পরিচিত।

২-৩ লিটার পানি পান করুন

পর্যাপ্ত পানি পান করার অভ্যাস টক্সিন দূর করতে সাহায্য করে। এটি হজম প্রক্রিয়া সহজ করে। সেইসঙ্গে লিভার ও কিডনির উপর থেকে বোঝা কমায়। আপনার যদি শুধু পানি খেতে ভালো না লাগে তবে এর পাশাপাশি কিছু তরলজাতীয় স্বাস্থ্যকর পানীয়ও যোগ করতে পারেন। যেমন বিভিন্ন ফলের রস, ডাবের পানি, ভেষজ চা ইত্যাদি।

ধনিয়া পাতার ব্যবহার বাড়ান

ধনিয়া পাতা হজমের রস নিঃসরণকে উদ্দীপিত করে এবং টক্সিন বের করে দিতে সাহায্য করে। ধনিয়া দীর্ঘকাল ধরে লিভারের স্বাস্থ্যের উন্নতিতে ব্যবহৃত হয়ে আসছে।

বেশি করে মটরশুঁটি, সবুজ শাক, ফল এবং বাদাম খান

এ ধরনের খাবার ফাইবার সমৃদ্ধ। সেইসঙ্গে এতে আছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, খনিজ এবং ভিটামিন যা সামগ্রিক স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী। তাই প্রতিদিনের খাবারের তালিকায় এ ধরনের খাবার যোগ করুন। এতে ফ্যাটি লিভার থেকে রক্ষা পাওয়া সহজ হবে।

ওমেগা থ্রি যুক্ত খাবার

ফ্যাটযুক্ত খাবার মানেই ক্ষতিকর নয়। কিছু ফ্যাট থাকে যেগুলো শরীরের জন্য উপকারী। তেমনই একটি হলো ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড। এটি শরীরের জন্য বেশ উপকারী। শরীরের খারাপ কোলেস্টেরল কমাতে কাজ করে ওমেগা থ্রি। সেইসঙ্গে কমায় ট্রাইগ্লিসারাইডস। যে কারণে ওমেগা থ্রি যুক্ত খাবার খাওয়া জরুরি। সামুদ্রিক মাছ ছাড়াও ফ্ল্যাক্সসিড, আমন্ড ও ওয়ালনাটে এই উপাদান পাওয়া যায়।

দিনে ২ কাপ কফি/গ্রিন টি

কফির নানা উপকারিতার কথা শুনেছেন। নিজেকে চাঙা রাখতে এক কাপ কফি খেয়ে থাকেন অনেকেই। সেইসঙ্গে এটি ফ্যাটি লিভারের জন্য বেশি উপকারী। এক গবেষণায় দেখা গেছে, কফি পান করার মাধ্যমে লিভারের ক্ষত সেরে ওঠে। কফি রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রাও কমিয়ে দেয়। সেইসঙ্গে বিপাক ক্রিয়া ঠিকমতো চলতে সাহায্য করে। বিশেষজ্ঞরা দিনে দুই কাপ কফি খাওয়ার পরামর্শ দেন। তবে তা হতে হবে ব্ল্যাক কফি।

একই রকম উপকারী পানীয় গ্রিন টি। এটি বিভিন্ন অসুখ থেকে আপনাকে মুক্তি দিতে পারে। এতে আছে পর্যাপ্ত অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা বিপাকের হার ঠিক রাখে। এই উপাদান শরীর থেকে ক্ষতিকর পদার্থ বের করে দিতে পারে। গ্রিন টি-তে থাকে ক্যাটাচিনস নামক অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা ফ্যাটি লিভারের ক্ষেত্রে উপকারী। নিয়মিত গ্রিন টি খাওয়ার অভ্যাস করুন।

অ্যালোভেরা ও আমলার জুস-

অ্যালোভেরা লিভারের স্বাস্থ্যের জন্য দারুণ উপকারী। লিভারের কার্যকারিতা বাড়ায়। অ্যালোভেরা লিভারে জমে থাকা নোংরা চর্বি দূর করে। যাঁরা ঘন ঘন জন্ডিসে আক্রান্ত হন বা আগে জন্ডিসে ভুগছিলেন তাঁদের জন্য এটি অব্যর্থ দাওয়াই। আমলার রস- ফ্যাটি লিভার বা জন্ডিসের মতো গুরুতর রোগে ভুগলে প্রতিদিন আমলার রস পান করুন। অ্যালোভেরা এবং আমলা জুস জলে মিশিয়ে সকালে খালি পেটে পান। উপকার পাবেন। 

এছাড়াও যে বিষয়গুলো লক্ষ্য রাখবেন- দিনে অন্তত ৮ ঘণ্টা ঘুম নিশ্চিত করুন। খাওয়ার সময়ের মাঝে খুব বেশি ব্যবধানে খাওয়া নয়। পরিমাণ কম হবে, তবে ঘনঘন খাওয়ার চেষ্টা করুন। ভাজাভুজি, ঘি, মাখন, চিজ, রেড মিট, চিনি,ময়দা, মদ নিষিদ্ধ তালিকায় রাখুন।

বি.দ্র: অবশ্যই নিজস্ব ডাক্তারের পরামর্শ মতো ব্যবস্থা গ্রহণ বাঞ্চনীয়। অনেক ক্ষেত্রে অন্যান্য উপসর্গের জন্য সব খাবার সবার জন্য সমান ভাবে কার্যকর নাও হতে পারে।