ফাগুনের আগমনে পাতা ঝড়িয়ে বিদায় নিয়েছে শীত। গরম আসন্ন প্রায়। ফাল্গুনের পরই আসছে চৈত্র বৈশাখ। এই গ্রীস্মে প্রকৃতি থাকে উষ্ণভ বাইরে থাকে প্রখর রোদ। সমানতালে এগিয়ে চলা নারীও তো আর এখন গৃহবাসীনি নন। প্রয়োজনেই বাইরে বেরুতে হয় তাদেরও।
বাইরে বেরুনো মানেই ধুলো-বালি। সাথে প্রকৃতির উত্তাপ। আমরা জানি সূর্যের প্রখর অতিবেগুনি রশ্মি আমাদের ত্বকের জন্য খুবই ক্ষতিকর। এতে আমাদের ত্বক নিস্তেজ, শুষ্ক এবং ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। এ ছাড়া এসময় ত্বক রোদে পুড়ে যায়। স্কিন ট্যান হয়ে যায়। এছাড়া রোদে পুড়ে বা অযত্নে আমাদের মুখের সঙ্গে হাতে-পায়ের রঙের ভিন্নতা দেখা যায়। ত্বকের ঔজ্জ্বল্য হারায়।
তাই এই গরমে ত্বকের জন্য চাই বাড়তি সচেতনতা ও যত্ন। তাই কিছু রুটিন মেনে চললে আমরা ত্বককে উজ্জ্বল এবং স্বাস্থ্যকর রাখতে পারি। এ ক্ষেত্রে ত্বকের ধরন জেনে যত্ন নিতে হবে।
সানস্ক্রিন ব্যবহার
গ্রীষ্মকালে ত্বকের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ জিনিসগুলির মধ্যে একটি হল সানস্ক্রিন লাগানো। কমপক্ষে এসপিএফ ৩০ বা তারও বেশি সানস্ক্রিন ব্যবহার করা উচিত। বাইরে যাওয়ার ১৫-৩০ মিনিট আগে সানস্ক্রিন প্রয়োগ করুন। এটি আপনার ত্বককে ক্ষতিকারক ইউভি রশ্মি থেকে রক্ষা করবে। ফলে রোদে পোড়া, অকাল বার্ধক্য এবং ট্যানিং হওয়া থেকে ত্বক বেঁচে যাবে।
পানি পান করা
সূর্যের আলোতে বেশিক্ষণ থাকলে তাপের ফলে ত্বকে দ্রুত ডিহাইড্রেশন হতে পারে। এছাড়াও ঘামের জন্য আমাদের শরীর থেকে প্রচুর পানি বের হয়ে যায়। তাই এই গরমে প্রচুর পানি পান করা উচিত। ফলে দেহেরে সাথে সাথে ত্বকও সুস্থ থাকবে। বাইরে গেলে একটি ওয়াটার বোতল সাথে রাখুন।
এ ছাড়া খাবারে পানি সমৃদ্ধ ফল এবং শাকসবজি রাখুন। যেমন তরমুজ, শসা, লাউ ইত্যাদি। এগুলো অতিরিক্ত পুষ্টি, ভিটামিন এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সরবরাহ করে। হাইড্রেটেড থাকলে ত্বক উজ্জ্বল দেখায়। ত্বকের বলিরেখাও প্রতিরোধ করে।
ম্যাসাজ করুন
ত্বকের যত্নে মেকআপের আগে ৫ মিনিটের জন্য আপনার মুখ হালকা ম্যাসাজ করুন। এতে ফোলাভাব কমে যাবে। ত্বক পানি ধরে রাখে। এ সময় লাইট স্কিন কেয়ার প্রোডাক্ট ব্যবহার করুন। এতে ত্বকের ছিদ্রগুলিকে আটকাবে না। ত্বক ভারী বোধ করবে না। হালকা ওজনের ময়েশ্চারাইজার, সিরাম এবং সানস্ক্রিন বেছে নিন।
এক্সফোলিয়েট করুন
আমাদের ত্বক ৩০-৪০ দিন অন্তর নিজে থেকেই রিপ্লেস হয়। তাই মরা কোষ জমতে থাকে ত্বকের উপর। এক্সফোলিয়েশনের মাধ্যমে মরা কোষগুলো ত্বক থেকে পরিষ্কার করে দেওয়া হয় এবং এতে ত্বক কোমল ও সতেজ দেখায়। নিয়মিত ত্বক এক্সফোলিয়েট করলে, এটি ত্বকের ভিতরের স্তরকে ময়েশ্চারাইজ শোষণে সাহায্য করে।
তবে নরম্যাল ত্বক সপ্তাহে দু’দিন এক্সফোলিয়েট করুন। তৈলাক্ত ত্বকে আপনি প্রতিদিনই এক্সফোলিয়েটর ব্যবহার করতে পারেন। কিন্তু সংবেদনশীল ও শুষ্ক ত্বকে খুব বেশি এক্সফোলিয়েটর ব্যবহার করবেন না। শুধু যখন প্রয়োজন মনে হবে, তখনই করুন। কিন্তু দিনের চেয়ে রাতে ত্বক পরিষ্কার করা জরুরি। ক্লিনজিং, টোনিং, ময়েশ্চারাইজারের পাশাপাশি রাতে ত্বক এক্সফোলিয়েট করুন। সকালেও করতে পারেন। তবে, সকালে ত্বক এক্সফোলিয়েট করার পর অবশ্যই সানস্ক্রিন ব্যবহার করবেন।
রোদে পোড়া দাগ দূর করা
রোদে ত্বকে পুড়ে গেলে সপ্তাহে দুবার অ্যালোভেরা জেল বা অ্যালোভেরা আইস কিউব মুখে লাগান। এটি ব্রণ-সৃষ্টিকারী ব্যাকটেরিয়া থেকে মুক্তি দেবে। প্রদাহ কমাতেও সাহায্য হবে।
ব্রণ থেকে মুক্তি
যদি গরমে আপনার ব্রণ সমস্যা হয় তবে ব্রণ থেকে মুক্তি পেতে গ্রিন-টি আইস কিউব ব্যবহার করুন। অথবা গ্রিন-টি তৈরি করুন। এরসঙ্গে এসেনশিয়াল অয়েল যোগ করুন। এবার এগুলো আইস কিউবে রাখুন। বরফ হয়ে গেলে মুখে ঘষুণ।
মাস্ক
গরমকালে তৈলাক্ত ত্বকে নানা রকম সমস্যা দেখা দেয়। এ জন্য মুলতানি মাটি বা চন্দনের মাস্ক ব্যবহার করা উচিত। এই মাস্কগুলো ব্রণ এড়াতে ত্বককে গভীরভাবে পরিষ্কার করে।
ঠোঁটের যত্ন
ঠোঁটকে সূর্যের আলো থেকে রক্ষা করুন। ময়েশ্চারাইজড রাখুন। ইউভি রশ্মি থেকে সুরক্ষিত রাখতে এসপিএফ-১৫ বা তার বেশি যুক্ত লিপবাম লাগান।
ব্যবহার করুন ফেস মিস্ট
ত্বকের গভীরে ময়শ্চার ধরে রাখতে কার্যকর ফেস মিস্ট। ক্রিম লাগানোর আগে ফেস মিস্ট ছিটিয়ে নিলে ওই ক্রিম বেশি উপকারী। ফেস মিস্ট বাড়িতেও তৈরি করে নিতে পারেন। শসার রস, পাঁচ-ছ’টি পুদিনা পাতার নির্যাস, এক চা চামচ গোলাপ জল মিশিয়ে, পরিষ্কার তুলোয় করে মুখে লাগিয়ে নিন। সব ধরনের ত্বকেই এই মিশ্রণ উপকারী।