কয়েকদিন আগে বিদ্যুতের বকেয়া বাবদ ৮০০ মিলিয়ন ডলার দিতে বাংলাদেশকে তাগাদা দেয় আদানি পাওয়ার। এরপরই চুক্তিটি পর্যালোচনার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় বলে সংবাদমাধ্যমটিকে জানিয়েছেন বাংলাদেশের এক কর্মকর্তা। ভারতের আদানি পাওয়ার বিদ্যুতের দাম বেশি নিচ্ছে কি না সেটি পর্যালোচনা করবে বাংলাদেশ। আদানির বিদ্যুৎ ছাড়াও ভারতের সঙ্গে থাকা অন্যান্য চুক্তিও পর্যালোচনা করে দেখবে ঢাকা।
বৃহস্পতিবার ১২ সেপ্টেম্বর ভারতীয় সংবাদমাধ্যম ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শীর্ষ কর্মকর্তার বরাতে এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানায়।
এ বিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শীর্ষ কর্মকর্তার বরা দিয়ে বলেছেন, ভারতীয় ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোর বিশেষ করে আদানি গ্রুপের কার্যক্রম পর্যালোচনা করা হবে। কী ধরনের চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে; এর শর্তাগুলো কী-এসব নিয়ে। কারণ বিদেশি কোনও কোম্পানি বাংলাদেশের আইন অমান্য করতে পারবে না।
তিনি আরও বলেন, এই তদন্তের মূল লক্ষ্য ভারতীয় ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোকে লক্ষ্যবস্তু বানানো নয়। বরং বাংলাদেশ আসলে আদানি পাওয়ারকে কত টাকা দিচ্ছে, সেটা যৌক্তিক কিনা, সেসব প্রশ্নের জবাব খোঁজা হবে।
আদানি ছাড়াও ভারতীয় অন্যান্য প্রতিষ্ঠান পিটিসি ইন্ডিয়া, এনভিভিএল লিমিটেড এবং সেমকর্প এনার্জি ইন্ডিয়াও বাংলাদেশে বিদ্যুৎ সরবরাহ করে থাকে। বর্তমানে ভারতীয় প্রতিষ্ঠানগুলো গড়ে প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের জন্য ৮ দশমিক ৭৭ টাকা চার্জ করে থাকে। সেখানে আদানি পাওয়ার প্রতি ইউনিটে নেয় ১৪ দশমিক ০২ টাকা। যা অন্যান্যদের চেয়ে অস্বাভাবিক রকম বেশি।
এদিকে বাংলাদেশ পাওয়ার ডেভেলপমেন্ট বোর্ডের বার্ষিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২২-২৩ অর্থবছরে (জুলাই-জুন) ভারত থেকে আমদানি করা বিদ্যুতের গড় মূল্য ছিল প্রতি ইউনিটে ৮ টাকা ৭৭ পয়সা। তবে এটি কোম্পানি ভেদে ভিন্ন ছিল। এনভিভিএল লিমিটেডের ক্ষেত্রে প্রতি ইউনিটের মূল্য ছিল ৪ টাকা ২২ পয়সা থেকে ৮ টাকা ৪৫ পয়সা। পিটিসি ইন্ডিয়া লিমিটেড ৯ টাকা ৫ পয়সা, সেমক্রপ এনার্জি ইন্ডিয়া ৯ টাকা ৯৯ পয়সা এবং আদানি পাওয়ার বা এপিজেএল ১৪ টাকা ২ পয়সা।
উল্লেখ্য, ২০১৭ সালের একটি চুক্তির অধীনে বাংলাদেশে বিদ্যুৎ সরবরাহ করে আসছে আদানি পাওয়ার। ২০১৭ সালের ৫ নভেম্বর বাংলাদেশের বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের ও আদানি পাওয়ার (ঝাড়খণ্ড) লিমিটেড (এপিজেএল)-এর মধ্যে বিদ্যুৎ কেনার চুক্তি হয়। ২৫ বছরের জন্য ১ হাজার ৪৯৬ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ ক্রয় চুক্তি (পিপিএ) স্বাক্ষর করে তারা।
আদানি পাওয়ারের এক মুখপাত্র বলেন, বাংলাদেশ সরকার আমাদের পিপিএ পর্যালোচনা করছে-এ ধরনের কোনও তথ্য আমাদের কাছে নেই। আমরা প্রকৃত অংশীদারিত্বের চেতনা নিয়ে বিদ্যুৎ সরবরাহ অব্যাহত রেখেছি, যদিও আমাদের বিপুল পরিমাণ অর্থ বাংলাদেশ সরকারের কাছে পাওনা রয়েছে। আমরা তাদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছি এবং আমাদের পাওনা দ্রুত পরিশোধের জন্য অনুরোধ করেছি। কারণ এটি আমাদের কার্যক্রমকে টেকসই রাখার ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জ তৈরি করছে।
ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক প্রসঙ্গে ওই বাংলাদেশি শীর্ষ কর্মকর্তা বলেছেন, আমরা ভারতের সঙ্গে স্থিতিশীল ও নিরপেক্ষ সম্পর্ক চাই। ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বক্তব্যের দিকে ইঙ্গিত করে তিনি আরও বলেন, কিন্তু শেখ হাসিনাকে আশ্রয় দেওয়া একটি বড় সমস্যা। কারণ প্রথমে আমরা দেখেছি তিনি কিছুদিনের জন্য ছিলেন। আর এখন তাকে বাংলাদেশবিরোধী কার্যক্রম চালানোর সুযোগ দেওয়া হচ্ছে।
ড. ইউনূস যে অর্থনৈতিক পরিস্থিতির দিকেও নজর দিচ্ছেন সেই বিষয়ে এই কর্মকর্তা বলেছেন, শেখ হাসিনা প্রশাসনকে নষ্ট করে গেছেন, অর্থনীতি পচে গেছে, দুর্নীতি সর্বত্র। পিয়ন পর্যায়ের লোক কোটি কোটি টাকা বানিয়েছে। আমাদের প্রথমে পুরো ব্যবস্থাকে সচল করতে হবে, এটিকে কাজ করতে দিতে হবে এবং তারপরে এগিয়ে যেতে হবে।
প্রসংগত, ৫ আগস্ট গণবিপ্লবের মুখে প্রধানমন্ত্রিত্ব ছেড়ে ভারতে পালিয়ে যান সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর দুই দেশের মধ্যকার সম্পর্কে অবনতি হয়। ভারতে থাকা হাসিনাকে ফেরত আনার ইঙ্গিতও দিয়েছে বাংলাদেশ সরকার।
সূত্র: ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস