বিশ্বের সবচেয়ে দীর্ঘসময় ক্ষমতায় থাকা নারী সরকারপ্রধান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ব্রিটিশ সাময়িকী দ্য ইকোনমিস্ট প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে এশিয়ার 'আয়রন লেডি' হিসেবে উল্লেখ করেছে।
প্রায় দুই দশক প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্বে থেকে তিনি বাংলাদেশের ১৭ কোটি মানুষের দারিদ্র্য বিমোচনে নেতৃত্ব দিয়েছেন। ৭৫ বছর বয়সি শেখ হাসিনার দল আওয়ামী লীগ পরপর তিনটি নির্বাচনে জয়লাভ করেছে। সব মিলিয়ে চারটি, যা ইন্দিরা গান্ধী বা মার্গারেট থ্যাচারের চেয়েও বেশি। আগামী বছরের শুরুর দিকে নির্বাচনে জয়ী হবেন বলেও আশা করছেন তিনি।
বুধবার ২৪ মে ‘এশিয়ার লৌহ মানবী শেখ হাসিনা’ শিরোনামে সেই সাক্ষাৎকার প্রকাশ করেছে দ্য ইকোনমিস্ট। শেখ হাসিনার সাক্ষাৎকারের ওপর ভিত্তি করে একটি প্রতিবেদন তৈরি করেছে গণমাধ্যমটি। সাক্ষাৎকারে বাংলাদেশ নিয়ে তার স্বপ্ন ও উচ্চাশার বিষয়ে জানতে চেয়েছিল ব্রিটিশ এই সাময়িকী।
সাক্ষাতকারে শেখ হাসিনা বলেন, আমি এ দেশটিকে একটি ক্ষুধামুক্ত, দারিদ্র্যমুক্ত উন্নত দেশ হিসেবে গড়তে চাই।তারপর ভয়াবহ ইতিহাসের কথা উল্লেখ করে তিনি প্রশ্ন করেন, আপনি কী ভাবতে পারেন, তারা আমার বাবাকে হত্যা করেছে?
ইকোনমিস্ট বলছে, তার বাবা ও বাংলাদেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমান পাকিস্তানের কাছ থেকে দেশটির রক্তক্ষয়ী স্বাধীনতা লাভের চার বছর পর ১৯৭৫ সালে সামরিক অভ্যুত্থানে নিহত হন। তার ১৭ জন ঘনিষ্ঠ আত্মীয় খুন হয়েছিলেন। সেই সময় শেখ হাসিনা ইউরোপে থাকায় বেঁচে যান।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, তারা আমার ভাইকে, আমার মাকে, আরেক ভাইকে হত্যা করেছে— মাত্র দশ বছর বয়সী! আমার দুই বোন জামাই, আমার একমাত্র চাচা একজন প্রতিবন্ধী তাকেও হত্যা করেছে। এসব কথা বলার সময় তার চোখ অশ্রুতে ভিজে যায়।
দুর্নীতি সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে শেখ হাসিনা বলেন, হয়তো নিচের স্তরে কিছুটা দুর্নীতি আছে। তবে এখন খুব একটা নেই। কেউ যদি এমনটা করার সাহস করে, তবে আমি ব্যবস্থা নেব।
সাক্ষাতকারে বিএনপিকে অবৈধভাবে সামরিক শাসক দিয়ে গঠিত দল হিসেবে উল্লেখ করেছেন শেখ হাসিনা। পাকিস্তানের সাবেক মিত্র ও দেশের বড় ইসলামী দলটিকে যুদ্ধাপরাধী বলেছেন তিনি। শেখ হাসিনা বলেন, সত্যিকার অর্থে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার মতো কোনো দল আছে বলে আমরা মনে করি না।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিশ্বের সবচেয়ে বেশি সময় ক্ষমতায় থাকা নারী সরকারপ্রধান। এতে মার্গারেট থ্যাচার ও ইন্দিরা গান্ধীর সঙ্গে তাকে তুলনা করা হয়েছে।
৭৫ বছর বয়সী প্রধানমন্ত্রী তার দল আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব দিচ্ছেন। সবমিলিয়ে মোট চারবার ক্ষমতাসীন হয়েছে আওয়ামী লীগ। এর মধ্যে তার নেতৃত্বেই পরপর তিনটি নির্বাচনে জয়লাভ করেছে দলটি। যা ইন্দিরা গান্ধী বা মার্গারেট থ্যাচারের ক্ষমতার চেয়েও বেশি।
ইকোনমিস্টের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে- আসন্ন নির্বাচনেও বিএনপির ঘুরে দাঁড়াবার খুব একটা সম্ভাবনা নেই। একটি স্বাধীন ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের প্রতিশ্রুতি দেয়ার পাশাপাশি শেখ হাসিনা বলেছেন, শুধু প্রকৃত রাজনৈতিক দলকেই প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে দেয়া উচিত। বিরোধী দলের এ যোগ্যতা নেই।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শক্তহাতে শেখ হাসিনার ক্ষমতা ধরে রাখায় লাভবান হয়েছে বাংলাদেশ। অবকাঠামোগত বিনিয়োগসহ এমন কিছু নীতি তিনি প্রণয়ন করেছেন, যার মাধ্যমে প্রবৃদ্ধির গতি বজায় ছিল। দুর্বল কোনো সরকারের পক্ষে এটা করা হয় তো সম্ভব হতো না।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, বাংলাদেশের গণতন্ত্র রক্ষায় যুক্তরাষ্ট্র হয়তো এক সময় শেখ হাসিনাকে সতর্ক করেছিল। এখন যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান উদ্বেগ বাংলাদেশে চীনের স্থান করে নেওয়া। বাংলাদেশের সরকার বিনিয়োগের জন্য চীনকে প্রশ্রয় দিচ্ছে। ভারতের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ ব্যক্তিগত সম্পর্ক রয়েছে শেখ হাসিনার। তারাও একই দৃষ্টিভঙ্গি পোষণ করছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই তিন শক্তির সঙ্গে সম্পর্ক ঢেলে সাজাতে পারদর্শী বলে মনে হয়। বাস্তববাদী হওয়ায় এটি তার একটি সফলতা।
যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের সম্পর্কের বিষয়ে শেখ হাসিনা বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের সম্পর্ক তাদের নিজস্ব বিষয়, সেখানে আমি কেন নাক গলাতে যাব।
যুক্তরাষ্ট্রের সমালোচনা করে শেখ হাসিনা বলেছেন, নিজেদের গণতান্ত্রিক দেশ হিসেবে দাবি করলেও আমাদের দেশের ক্ষেত্রে তাদের সেই দৃষ্টিভঙ্গির প্রতিফলন দেখা যায় না। কেন আমাকে তারা সমর্থন করে না?
শেখ হাসিনা বলেছেন, অদূর ভবিষ্যতে অবসরে যাওয়ার কোনো পরিকল্পনা করছেন না তিনি। সরকারের ‘ভিশন-২০৪১’ পরিকল্পনার বাস্তবায়ন শেষপর্যন্ত দেখতে পাবেন না সেটাও স্বীকার করে দলে তার উত্তরসূরির বিষয়ে তিনি বলেন, আমি যদি না থাকি, তাহলে জানি না ক্ষমতায় কে আসবে।
ইকোনমিস্ট লিখেছে, শেখ হাসিনার দীর্ঘ রাজনৈতিক ক্যারিয়ার এক সাহসিকতার গল্প। এর মধ্যে কিছু তার নীতিগত সাফল্য, যা তিনি দাবি করতে পারেন।