ধেয়ে আসছে ঘূর্ণিঝড় দানা। বঙ্গপোসাগরে উদ্ভূত প্রবল শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় দানার সম্ভাব্য ক্ষয়ক্ষতি এড়াতে তৎপরতা শুরু করেছে ওড়িশার রাজ্য সরকার। এ জন্য পশ্চিমবঙ্গ এবং ওড়িশায় দুইশর বেশি ট্রেন বাতিল করা হয়েছে। কলকাতায় ১৫ ঘণ্টা বিমান চলাচল বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার ২৪ অক্টোবর সন্ধ্যার পর থেকে আগামীকাল শুক্রবার সকালের মধ্যে দানা স্থলভাগে আছড়ে পড়বে বলে ভারতের আবহাওয়া আফিস জানিয়েছে।
রাজ্যের ঝুঁকিতে থাকা বিভিন্ন থেকে মোট ১০ লাখ ৬০ হাজার ৩৩৬ জন মানুষকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়ার কাজ শুরু হয়েছে। ইতোমধ্যে ৪ লাখেরও বেশি মানুষকে স্থায়ী-অস্থায়ী ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। বাকিদেরও আজ বৃহস্পতিবার দুপুরের মধ্যে নিরাপদ স্থানে নিয়ে যাওয়া হবে বলে জানিয়েছেন ওড়িশা রাজ্য সরকারের কর ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিষয়ক মন্ত্রী সুরেশ পূজারী।
ইতোমধ্যেই দানার গতিবেগ ঘণ্টায় একশ কিলোমিটার পেরিয়েছে। প্রবল শক্তিসঞ্চয় করে তা ওড়িশার ভিতরকণিকা থেকে ধামারার মধ্যে আছড়ে পড়তে পারে। আজ সকালে এই ঘূর্ণিঝড় ভারতের ওড়িশা রাজ্যের পারাদ্বীপ থেকে তিনশ কিলোমিটার এবং সাগরদ্বীপ থেকে ৩৯০ কিলোমিটার দূরে আছে।
ঘণ্টায় ১৫ কিলোমিটার বেগে তা এগিয়ে আসছে। এই গতিবেগ আরো বাড়তে পারে। ল্যান্ডফল বা স্থলভূমিতে আছড়ে পড়ার সময় ঘূর্ণিঝড়ের গতিবেগ হতে পারে ঘণ্টায় ১২০ কিলোমিটার।
দানার ফলে পশ্চিমবঙ্গের পূর্ব মেদিনীপুরে ঘণ্টায় একশ কিলোমিটার বা তার থেকে বেশি জোরে ঝড় বইতে পারে। তাই পূর্ব মেদিনীপুরে ঝড় ও বৃষ্টি নিয়ে রেড অ্যালার্ট জারি করা হয়েছে।
দেশটির আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, দক্ষিণ ২৪ পরগনাতেও প্রবল ঝড়-বৃষ্টি হবে। সেখানেও বৃষ্টি ও বন্যা নিয়ে রেড অ্যলার্ট জারি করেছে প্রশাসন। কলকাতাতেও ঘণ্টায় ৮০ কিলোমিটার বেগে ঝড় হতে পারে।
কলকাতাসহ ৯ জেলায় ২৬ অক্টোবর পর্যন্ত সব স্কুল বন্ধ থাকছে। পশ্চিমবঙ্গে ১ লাখ ১৪ হাজার মানুষকে নিরাপদ জায়গায় সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। সমুদ্রে মাছ ধরতে যাওয়া বন্ধ আছে। দীঘা, মন্দারমণি, তাজপুরের মতো জায়গা থেকে পর্যটকদের চলে যেতে বলা হয়েছে।
দিঘায় বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই হালকা বৃষ্টি শুরু হয়েছে।
ঘূর্ণিঝড়ের পরিপ্রেক্ষিতে শিয়ালদহ দক্ষিণ শাখার ১৯০ টি লোকাল ট্রেন বাতিল করা হয়েছে। ১৪ ঘণ্টার জন্য এই শাখায় ট্রেন চলাচল বন্ধ থাকবে। বৃহস্পতি ও শুক্রবার একাধিক দূর পাল্লার ট্রেনও বাতিল হয়েছে।
এছাড়াও কলকাতা বিমানবন্দর ১৫ ঘণ্টার জন্য বন্ধ রাখা হবে। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ছয়টা থেকে শুক্রবার সকাল ৯টা পর্যন্ত কোনো বিমান কলকাতা বিমানবন্দর থেকে ছাড়বে না বা নামবে না।
তবে কলকাতা মেট্রো পরিষেবায় ঝড়ের প্রভাব পড়বে না বলে জানানো হয়েছে। ফলে মেট্রো তার সময় অনুযায়ী চলবে বলে এখনো ঠিক আছে।
অন্যদিকে ওড়িশার মুখ্যমন্ত্রী মোহন চরণ মাঝি জানিয়েছেন, রাজ্যের ১৪টি জেলায় দানার প্রভাব পড়বে। সরকার ১০ লাখ ৬০ হাজার মানুষকে নিরাপদ জায়গায় সরিয়ে নিয়ে য়াওয়ার পরিকল্পনা করেছে। বুধবার সন্ধ্যা পর্যন্ত তিন লাখের বেশি মানুষকে নিরাপদ আশ্রয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।
ওড়িশায় ১৪টি জেলায় সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ২৫ তারিখ পর্যন্ত বন্ধ রাখা হয়েছে। উদ্ধারকারী দলকে প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
পুরী-সহ বিভিন্ন পর্যটক আকর্ষক স্থানগুলি পর্যটকশূন্য করে দেয়া হয়েছে। পুরীর প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, রাজ্যের ভিতর থেকেও প্রচুর বয়স্ক মানুষ প্রতিদিন জগন্নাথ মন্দির দর্শন করতে আসেন। ঘূর্ণিঝড়ের কথা মাথায় রেখে বৃহস্পতি ও শুক্রবার বয়স্কদের মন্দিরে প্রবেশ নিষিদ্ধ করে দেয়া হয়েছে।
কটক হাইকোর্ট, ভিতরকণিকা ওয়াইল্ড লাইফ স্যাংচুযারি, নন্দনকানন জু, সিমলিপাল টাইগার রিজার্ভ, গ্রন্থাগার, আর্কাইভ, যাদুঘরও বৃহস্পতি ও শুক্রবার বন্ধ থাকবে।
সূত্র : পিটিআই, এএনআই, ডয়চে ভেলে