ভারতে পশ্চিমবঙ্গে এক রাজনৈতিক দলের নেতার সাক্ষাৎকার নিতে গেলে সাক্ষাৎকার দেওয়ার সময় সেই নারীরই কোলে বসে পড়েন সেই বামপন্থী নেতা। এমন অভিযোগ করে মহিলা সাংবাদিক বলেন, তন্ময় ভট্টাচার্যের তার কোলে উঠে বসেন। তিনি বলেন, ‘এরাই আসলে সম্ভাব্য ধর্ষক, চিনে রাখা দরকার’।
রবিবার ২৭ অক্টোবর এমন চাঞ্চল্যকর অভিযোগ করেন এক মহিলা সাংবাদিক। ওই সাংবাদিকের অভিযোগ ছিল, বাম নেতা তন্ময় ভট্টাচার্য তাঁর সঙ্গে অশালীন আচরণ করেছেন। পাশাপাশি তাঁর অভিযোগ ছিল তন্ময় ভট্টাচার্য তাঁর কোলে বসে পড়েছিলেন। গোটা ঘটনা ফেসবুক লাইভে শেয়ার করেন ওই মহিলা সাংবাদিক। সেই ভিডিও ভাইরাল হয়ে যায়।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম হিন্দুস্তান টাইমসের প্রতিবেদনে বলা হয়, বর্ষীয়ান বাম নেতা ও সাবেক বিধায়ক তন্ময় ভট্টাচার্যের বিরুদ্ধে হেনস্থার অভিযোগ এনেছেন নারী সাংবাদিক। ক্ষমতাসীন দল তৃণমূল কংগ্রেসের মুখপাত্র কুণাল ঘোষ অবিলম্বে তন্ময় ভট্টাচর্যকে গ্রেফতারের দাবি জানান।
লাইভে ওই বামনেতার বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ করেন ওই তরুণী সাংবাদিক। ক্যাপশনে তিনি লেখেন,চার বছর সাংবাদিকতা করছি কিন্তু এত খারাপ অভিজ্ঞতা আমার কখনও হয়নি। আসলে পোটেনশিয়াল রেপিস্ট এরাই। এদের চিনে রাখা দরকার। সোশ্যাল মিডিয়ায় এই অভিযোগের পর প্রাক্তন বাম বিধায়কের সঙ্গে টাইমস নাও খবর যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, গোটা ঘটনায় তিনি স্তম্ভিত।
তাঁর বক্তব্য এই মহিলা সাংবাদিক আগে অন্তত ১৫ বার তাঁর ইন্টারভিউ নিয়েছেন। কিন্তু কখন কোনও সমস্যার কথা জানাননি। এবার হঠাৎ কী এমন ঘটল যে তিনি এই ভাবে ফেসবুক লাইভ করলেন।
তবে তন্ময় ভট্টাচার্য ঘটনার সাফাইয়ে এধরনের প্রতিক্রিয়া দিলেও সামাজিক মাধ্যমে ওই মহিলা সাংবাদিক যে 'ইয়ার্কির' ছলে বার বার গায়ে হাত দেওয়ার অভিযোগ তোলেন। তাঁর সমর্থনে একাধিক ফেসবুক ইউজার কমেন্ট করে জানান বিভিন্ন সময় কথা বলতে গিয়ে তাঁরাও এই ধরনের অভিজ্ঞতার সম্মুখিন হয়েছেন।
দাবানলের মতো ছড়িয়ে পড়ে সেই ফেসবুক লাইভ।
কলকাতায় আরজি কর আবহে যখন নারী নিরাপত্তা ও নারী সুরক্ষা নিয়ে এত আন্দোলন, এত মিছিল, সেখানে সিপিএম-এর বর্ষীয়ান নেতার বিরুদ্ধে এ হেন অভিযোগ স্বভাবতই দলকে অস্বস্তিতে ফেলে।
সিপিএম-কে কড়া প্রশ্নবাণেবিদ্ধ করে শাসকদল তৃণমূল। দলের মুখপাত্র কুণাল ঘোষ অবিলম্বে তন্ময় ভট্টাচর্যকে গ্রেফতারির দাবি জানান। বাম নেতা তন্ময় ভট্টাচার্যকে ডেকে পাঠাল বরানগর থানা। জানা গিয়েছে, বরানগর থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করা হয়েছিল। সেই অভিযোগের ভিত্তিতেই বাম নেতাকে ডেকে পাঠানো হয়েছে।
পরে সিপিআইএম দলের পক্ষ থেকেও তন্ময় ভট্টাচার্যকে সাসপেন্ড করা হয়। পরিস্থিতি অন্যদিকে মোড় নিতে পারে এই আশঙ্কাতেই কার্যত তড়িঘড়ি সিদ্ধান্ত নেয় সিপিএম।
এই প্রসঙ্গে তন্ময় ভট্টাচার্য দাবি করেন, আদতে এমন কিছুই হয়নি। আমি অনেকের সঙ্গে ইয়ার্কি করি। আগে ওই মেয়েটি অন্তত দশবার আমার সাক্ষাৎকার নিয়েছে। ওর সঙ্গে আমি আগেও ইয়ার্কি করেছি। কিন্তু আজকে হঠাৎ কী হল আমি জানি না। একটা বাচ্চা মেয়ে। ওকে আমি মা বলে ডাকি। ও একথা বলবে ভাবতে পারছি না।’
টলিউড তারকা শ্রীলেখা মিত্র বলেছেন, ‘অভিযুক্ত না কি দোষী...দল সাসপেন্ড কিন্ত করল অভিযোগ হলেই সে অভিযুক্ত নয়’ - এটা যারা বিশ্বাস করেন, এবার তারা কী বলবেন দেখা যাক! নিজের বেলায় আঁটিসাঁটি পরের বেলায় দাঁতকপাটি - এটা হয় না। আমরা কিন্তু বরাবরই বিশ্বাস করি অভিযোগ যার নামে, সে অবশ্যই অভিযুক্ত।'
এই নিয়ে সাংবাদিকদের মহম্মদ সেলিম জানান, যে ধরণের অভিযোগ এসেছে তাতে তদন্ত হওয়ার প্রয়োজন। তবে এই ধরণের অভিযোগ যে উঠছে সেই বিষয়টিই সমর্থন যোগ্য নয়।
এরপরই তন্ময় ভট্টাচার্যের বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ নেওয়ার কথা জানান তিনি। শাস্তির কথা বলার পাশাপাশি মহম্মদ সেলিম আরও বলেন, এও বলেন বুঝতে পারছি না কেন তিনি এই ধরনের সাক্ষাৎকারগুলো বাড়িতে ডেকে দিতেন। অন্যদিকে, তন্ময়ের গ্রেফতারির দাবিতে সরব হয়েছেন তৃণমূল নেতা কুণাল ঘোষ।
সূত্র: ইন্ডিয়ান টাইমস, টাইমস নাউ বেঙ্গলী