ভারতের পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি গুরুতর আহত হয়েছেন।
শুক্রবার ১৫ মার্চ বিবিসির এক প্রতিবেদনে জানা যায়, রাতে প্রাথমিক চিকিৎসার পরে বাড়িতে ফিরেছেন মুখ্যমন্ত্রী। তার ভাইপো অভিষেক ব্যানার্জী জানিয়েছেন, মমতা ব্যানার্জীর কপালে চারটে সেলাই পড়েছে। কোনও ইন্টার্নাল হেমারেজ হয়েছে কী না, সেটা জানতে এমআরআই স্ক্যান করা হয়েছে তার।
ব্যানার্জীর পরিবারের সূত্রগুলি জানাচ্ছে গতকাল তিনি বাড়িতে নিজের ঘরেই পড়ে যান, ঘরের একটি আলমারিতে তার মাথা ঠুকে যায়।
এর আগে বৃহস্পতিবার ১৪ মার্চ মাইক্রো ব্লগিং সাইট এক্সে এক পোষ্টে মমতার রাজনৈতিক দল তৃণমূল কংগ্রেস মমতার তিনটি ছবি প্রকাশ করে। যেখানে দেখা যায়, গুরুতর আহত হয়েছেন তিনি। তার কপালে বড় ধরনের জখম। আর সেখান থেকে রক্ত গড়িয়ে তার মুখে এসে পড়েছে। তবে কীভাবে তিনি আহত হয়েছেন এ ব্যাপারে বিস্তারিত কোনো কিছুই জানায়নি তার দল। এছাড়া পশ্চিমবঙ্গের সরকারের পক্ষ থেকেও কোনো তথ্য দেওয়া হয়নি।
এক্সে তৃণমূল কংগ্রেস শুধু লিখেছে, আমাদের চেয়ারপারসন মমতা ব্যানার্জি বড় আঘাত পেয়েছেন। দয়া করে তার জন্য প্রার্থনা করুন।
অবশ্য পরবর্তীতে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এবিপি আনন্দ সূত্রে জানা যায়, এসএসকেএম হাসপাতালে আনা হয় মমতাকে। হাসপাতালের বরাতে জানায়, ৬৯ বছর বয়সী মমতা তার বাড়ির ভেতর পা পিছলে একটি ফার্নিচারের ওপর পড়েন। এরপর তাকে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। দুর্ঘটনায় আহত হওয়ার কিছুক্ষণ আগে দক্ষিণ কলকাতার বাল্লেগঞ্জ থেকে বাড়িতে ফিরেছিলেন তিনি।
গাড়িতে চেপে ফেরার সময় তিনি আহত হন বলে জানা যায় প্রথমে। আবার একটি সূত্রে দাবি করা হয়, গাড়ি বাড়িতে ঢোকার পরই দুর্ঘটনা ঘটে বলেও জানা গিয়েছে। হাঁটতে গিয়ে পড়ে যান। হাসপাতাল থেকে যে ছবি সামনে এসেছে, তাতে কপাল থেকে রক্ত পড়তে দেখা গিয়েছে। অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় এবং পরিবারের লোকজন মমতাকে হাসপাতালে নিয়ে যান বলে জানা গেছে।
দলীয় সূত্রে যে খবর মিলেছে, সেই অনুযায়ী, বালিগঞ্জে এদিন সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের মূর্তি উন্মোচন অনুষ্ঠানে গিয়েছিলেন মমতা। সেখানে যে পোশাক পরেছিলেন তিনি, হাসপাতালে পরিহিত পোশাকের সঙ্গে মিল নেই তার। দলীয় সূত্রে খবর, বাড়ি ফিরে পোশাক পাল্টেছিলেন মমতা। তার পর হাঁটা শুরু করেন। একটি শোকেসের কোনায় মাথা ঠুকে গিয়ে আঘাত পান। বাড়িতে পড়ে গিয়ে মমতা আঘাত পান বলে জানা যাচ্ছে পুলিশ সূত্রেও। তবে পা পিছলে পড়ে গিয়েছেন মমতা, নাকি এর নেপথ্যে অন্য কারণ রয়েছে, তা এখনও খোলসা হয়নি।
দলীয় সূত্রে জানায়, বয়স ৭০ ছুঁইছুঁই হলেও, নিয়মিত হাঁটাহাঁটি করেন মমতা। এদিনও বাড়ি ফিরে হাঁটার প্রস্তুতিই নিচ্ছিলেন। সেই সময়ই ঘরের মধ্যে পড়ে যান। সেই সময় বাড়িতেই ছিলেন কাজরী বন্দ্যোপাধ্যায়, অভিষেক এবং আবেশ বন্দোপাধ্যায়রা। তড়িঘড়ি মমতাকে এসএসকেএম হাসপাতালে নিয়ে ছোটেন তাঁরা। সেখানে উডবার্ন ব্লকের সাড়ে ১২ নম্বর কেবিনে চিকিৎসা শুরু হয়েছে তাঁর। অ্যাপোলো হাসপাতাল থেকেও একজন বিশেষজ্ঞ এসে পৌঁছেছেন। ক্ষতের উপর সেলাই করতে হবে বলে জানা গিয়েছে। এমআরআই এবং CT স্ক্যান করা হয়েছে বলে জানা গেছে। তবে সেলাই বা প্রয়োজনীয় চিকিৎসার আগে মমতার ভাইটাল প্যারামিটার্সগুলি খতিয়ে দেখা প্রয়োজন। মাথার আঘাত কতটা গুরুতর, তা-ও দেখতে হবে। তার প্রস্তুতি শুরু হয়েছে।
ইতিমধ্যেই হাসপাতালে ভিড় জমিয়েছেন সাধারণ মানুষজন। তবে আঘাত কতটা গুরুতর, তা জানতে আরও কিছুটা সময় লাগবে বলে জানা গিয়েছে হাসপাতাল সূত্রে।