বাংলাদেশে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার এবং স্থিতিশীলতা আনতে ড. ইউনূস সরকার যে কর্মপরিকল্পনা নিয়ে এগুচ্ছে তাতে যুক্তরাজ্যের পূর্ণ সমর্থন রয়েছে বলে জানিয়েছেন যুক্তরাজ্যের ইন্দো-প্যাসিফিক বিষয়ক মন্ত্রী ক্যাথরিন ওয়েস্ট।
তিনি বলেছেন, বাংলাদেশের অন্তবর্তীকালীন সরকার জাতীয় ঐক্য ত্বরান্বিত করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। তাই যুক্তরাজ্য আশা করছে, কীভাবে সেসব বাস্তবায়ন করা হবে, সে বিষয়ে তার পরিকল্পনা তুলে ধরবেন প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনুস।
রবিবার ১৭ নভেম্বর পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌফিক হোসেনের সঙ্গে বৈঠকের পর তিনি সাংবাদিকদের এ কথা বলেন।
পরিবর্তিত রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে আগামী নির্বাচনে সব রাজনৈতিক দলের জন্য লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড থাকবে কি না- সাংবাদিকের এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, অবশ্যই এবং আমরা আশা করছি, কীভাবে এসব ঘটবে সে বিষয়ে তার দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরবেন অধ্যাপক ইউনূস।
ওয়েস্ট বলেন, তারা জানেন, বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার শান্তি ও শৃঙ্খলা পুনঃপ্রতিষ্ঠা, জবাবদিহি নিশ্চিত করা এবং জাতীয় ঐক্য প্রতিষ্ঠায় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ এবং এসব উদ্দেশ্য সাধন করতে যুক্তরাজ্য সরকারের পূর্ণ সমর্থন রয়েছে।
ওয়েস্ট বলেন, বাংলাদেশের জনগণের সঙ্গে আমাদের খুব শক্তিশালী ও অবিচল বন্ধুত্ব রয়েছে। আমরা শক্তিশালী অংশীদারত্ব গঠন করতে চাই এবং সেই গুরুত্বপূর্ণ ভিত্তিপ্রস্তরটি শক্তিশালী সম্পর্কের ওপর নির্মাণ করতে চাই। পাশাপাশি একটি গণতান্ত্রিক ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে যেতে চাই।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন তারেক রহমানের দেশে ফেরার বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে ব্রিটিশ মন্ত্রী বলেন, তারা একক কোনো বিষয় নিয়ে আলোচনা করেননি। তবে বাংলাদেশ বর্তমানে রূপান্তরের পর্যায়ে থাকায় তারা সরকারকে সমর্থন করতে চান।
ক্যাথরিন বলেন, ১১ বছর পর আমি বাংলাদেশে এসেছি। সেই হিসেবে এটি বাংলাদেশে আমার দ্বিতীয় সফর। এখন ইন্দো-প্যাসিফিক মন্ত্রী হিসেবে এখানে আসতে পেরে খুব খুশি। অন্তর্বর্তী সরকারের পররাষ্ট্র উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠক করেছি। আমরা জানি, বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার শান্তি ও শৃঙ্খলা পুনরুদ্ধার, জবাবদিহি নিশ্চিত করতে চায় এবং জাতীয় পুনর্মিলনকে এগিয়ে নিতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। আর এ বিষয়ে আমাদের পূর্ণ সমর্থন রয়েছে।
রাজনৈতিক সমঝোতার বিষয়ে ক্যাথরিন বলেন, প্রফেসর ইউনূস বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক ভবিষ্যৎ নিয়ে তার দৃষ্টিভঙ্গি প্রকাশ করবেন আর সেটা উন্মোচিত হওয়ার আশা রাখছি।
তারেক রহমানের দেশে ফেরানো প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, পররাষ্ট্র উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকে কোনো নির্দিষ্ট ব্যক্তির বিষয়ে কথা হয়নি। তবে সরকার তাকে ফেরাতে চাইলে সহায়তা করতে প্রস্তুত ব্রিটেন।
এছাড়াও বৈঠকে পররাষ্ট্র উপদেষ্টার সঙ্গে দুই দেশের অর্থনীতি, নিরাপত্তা, জলবায়ু পরিবর্তন ও অভিবাসন নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এছাড়া রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর জন্য ১০ মিলিয়ন পাউন্ড সহায়তা ঘোষণা করেন তিনি।
এর আগে দুই দিনের সফরে শনিবার ১৬ নভেম্বর ঢাকায় এসেছেন যুক্তরাজ্যের ইন্দো-প্যাসিফিক স্ট্র্যাটেজি (আইপিএস) বিষয়ক আন্ডার সেক্রেটারি ক্যাথরিন ওয়েস্ট।
গত আগস্টে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের পর এই প্রথম যুক্তরাজ্যের কোনো মন্ত্রীর সফর বাংলাদেশ সফর।
ঢাকায় ব্রিটিশ হাইকমিশন জানায়, যুক্তরাজ্যের ইন্দো-প্যাসিফিক বিষয়ক মন্ত্রী ক্যাথরিন ওয়েস্ট আজ বাংলাদেশে এসেছেন। সফরে তিনি প্রধান উপদেষ্টা ও পররাষ্ট্র উপদেষ্টার পাশাপাশি বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক পুনরুদ্ধারে যুক্তরাজ্যের সমর্থন নিয়ে ছাত্রনেতা ও রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বৈঠক করবেন ব্রিটিশ মন্ত্রী।এছাড়া দৃঢ় সম্পর্ক অব্যাহত রাখতে এবং পারস্পরিক লাভজনক বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বাড়ানোর বিষয়ে ব্যবসায়ী নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করবেন তিনি।