বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা অবমাননার অভিযোগের মামলায় বাংলাদেশ সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাসকে গ্রেফতার ও জামিন বাতিলের ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে ভারত সরকার।
মঙ্গলবার ২৬ নভেম্বর দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দেয়া এক বিবৃতিতে উদ্বেগ জানিয়ে বলা হয়, তাকে আটকের পর বাংলাদেশের চরমপন্থী গ্রুপগুলো হিন্দু সম্প্রদায় ও অন্যান্য সংখ্যালঘুদের ওপরও হামলা চালিয়েছে। এছাড়াও হিন্দু এবং ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের বাড়িঘর ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে অগ্নিসংযোগ, লুটপাট, ভাঙচুর এবং মন্দিরে হামলার মতো ঘটনাও ঘটছে বাংলাদেশে।
বিবৃতিতে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, সংখ্যালঘুদের ওপর হামলার ঘটনায় অপরাধীরা যেখানে ধরা-ছোঁয়ার বাইরে, সেখানে একজন ধর্মীয় নেতা এসব অন্যায়ের বিরুদ্ধে যখন কথা বলেছে তার বিরুদ্ধে পাল্টা অভিযোগ এনে গ্রেফতার করা হয়েছে। বাংলাদেশের হিন্দুসহ সকল সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা নিশ্চিত এবং স্বাধীনভাবে মত প্রকাশের স্বাধীনতা নিশ্চিতের আহ্বান জানানো হয় বিবৃতিতে।
প্রসঙ্গত, জাতীয় পতাকা অবমাননার অভিযোগের মামলায় চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের জামিন নামঞ্জুর করে আজ কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন চট্টগ্রাম ৬ষ্ঠ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট কাজী শরীফুল ইসলামের আদালত।এর আগে সোমবার বিকেলে তাকে রাজধানীর বিমানবন্দর এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয়। গত ৩১ অক্টোবর বিএনপি নেতা ফিরোজ খান (পরে বহিষ্কৃত) বাদী হয়ে চট্টগ্রামের কোতোয়ালি থানায় চিন্ময় কৃষ্ণ দাসসহ ১৯ জনকে আসামি করে একটি মামলা করেন।
মামলায় অভিযোগ করা হয়, গত ৫ আগস্ট বাংলাদেশে গণঅভ্যুত্থান সংঘটিত হওয়ার পর নগরের নিউমার্কেট মোড়ের জিরো পয়েন্টে স্তম্ভের ওপর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতা একটি জাতীয় পতাকা উত্তোলন করে, যা এখনও সেখানে রয়েছে। ২৫ অক্টোবর বাংলাদেশ সনাতন জাগরণ মঞ্চের উদ্যোগে লালদীঘির মাঠে একটি মহাসমাবেশ হয়।
চট্টগ্রাম বিভাগের বিভিন্ন এলাকা থেকে হাজারো মানুষ ওই সমাবেশে যোগ দেন। ওইদিন চন্দন কুমার ধরসহ ৯ জন আসামির ইন্ধনে বাকি আসামিরা নিউমার্কেট মোড়ের জিরো পয়েন্ট স্তম্ভ ও আশপাশে বাংলাদেশের জাতীয় পতাকার ওপর ধর্মীয় গোষ্ঠী ইসকনের গেরুয়া রঙের ধর্মীয় পতাকা উত্তোলন করে সেখানে স্থাপন করে দেয়। এ নিয়ে সাধারণ নাগরিকদের ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি হয়।
এদিকে আজ বিকেলে পুলিশ জানায়, শুনানি শেষে আদালত চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন আদালত। এসময় আদালত প্রাঙ্গণে তাকে বহনকারী প্রিজনভ্যান আটকে দিয়ে বিক্ষোভ করতে থাকেন তার অনুসারীরা। পরে আদালত এলাকায় ভাঙচুর শুরু করেন তারা। পাশাপাশি আইনজীবীদের কক্ষ ভাঙচুর করা হয়। এরই মধ্যে পুলিশ প্রিজনভ্যানে করে নিয়ে যেতে চাইলে সেটির চাকার হাওয়া ছেড়ে দেওয়া হয়। পরে পুলিশের গাড়িতে করে চিন্ময় কৃষ্ণকে চট্টগ্রাম কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয়।
কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ফজলুল কাদের চৌধুরী বলেন, ‘চিন্ময়ের ভক্তরা আদালত এলাকায় হামলা চালিয়েছেন। বারবার অনুরোধ করা হলেও সরে যাননি। পরে ছত্রভঙ্গ করে দেওয়া হয়। পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ চলাকালে ইসকনের সদস্য বিক্ষোভকারীরা একটি মসজিদসহ বেশ কয়েকটি স্থাপনায় ভাঙচুর চালায়
নগর পুলিশের অতিরিক্ত উপপুলিশ কমিশনার কাজী মো. তারেক আজিজ বলেন, আদালত এলাকায় বিক্ষোভকারীদের হামলায় এক আইনজীবী নিহত হয়েছেন। তাকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে। তার লাশ চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মর্গে রাখা হয়েছে।
প্রসঙ্গত, নিহত আইনজীবি সাইফুল ইসলাম চট্টগ্রামে লোহাগাড়া উপজেলার জালাল উদ্দিনের ছেলে। তিনি মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট কোর্টে সহকারী পাবলিক প্রসিকিউটর হিসেবে কর্মরত ছিলেন।